বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা:
শনিবার ষষ্ঠ দফার লোকসভা ভোটে বাংলায় মোট আটটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এগুলি হল ঘাটাল, কাঁথি, তমলুক, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া। ভোট নির্বিঘ্নে করাতে প্রায় এক হাজার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আটটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে নজরকাড়া কেন্দ্র হল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক।
এর দু’টি কারণ। এক, এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি, যিনি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সাড়া জাগানো সব রায় দিয়ে বাংলার মানুষের নজর কেড়েছিলেন। তাঁর বিপরীতে তৃণমূলের তরুণ প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। একদিকে বিজেপি অভিজিৎবাবুর জয় নিয়ে আশাবাদী। অন্যদিকে, তৃণমূল অভিজিৎবাবুর সব রায় মেনে নিতে পারেনি। তাই জনতার আদালতে তাঁকে হারাতে মরিয়া তারা।
দুই, এই তমলুক কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে সেই নন্দীগ্রাম, যেখানে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী হারিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আজও বিভিন্ন জনসভায় শুভেন্দু তাঁর এই জয়ের কথা বলে মমতা ও তাঁর দল তৃণমূলের জ্বালা বাড়িয়ে দেয়। মমতাও এই হার ভুলতে পারেননি। ক’দিন আগেও পূর্ব মেদিনীপুরে নির্বাচনী প্রচার করতে এসে মমতা বলেছিলেন, ওই হারের বদলা নেব। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের প্রায় সর্বত্র জয়ের নিশান ওড়ালেও তৃণমূল নন্দীগ্রামে এসে হোঁচট খেয়েছিল। তাই এবার লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রামে বিজেপির থেকে এগিয়ে থাকতে তৃণমূল কংগ্রেস কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাহলেও কিছুটা জ্বালা জুড়োবে!
ভোটের মাত্র দু’দিন আগে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় মনসাবাজারে বিজেপির এক তফসিলি মহিলা কর্মী রথিবালা আড়ি খুন হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলে উত্তেজনা রয়েছে। ওই ঘটনায় নিহতের ছেলে-সহ তিন বিজেপি কর্মী গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভরতি। বিজেপি বিপুল ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে এই খুনের বদলা নিতে চায়। তবে ভোটের দিন নন্দীগ্রামে কী হয়, সেদিকে নজর রয়েছে সকলের।
সাধারণ মানুষও আশঙ্কায় রয়েছে। কারণ কোনও দলও প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। যদিও নন্দীগ্রামের অতীত জমি আন্দোলনের ইতিহাস এবং দু’দিন আগের খুনের কথা মাথায় রেখে নন্দীগ্রামে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঠিকমতো ব্যবহার না করলে গন্ডগোলের আশঙ্কা রয়েছে। বিজেপির মহিলা কর্মী খুনের ঘটনা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, খুনিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন থানার আইসি। তাই পুলিশে ভরসা নেই তাঁদের। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে তৎপর হতে বলেছেন। অন্যদিকে, তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি অশান্তি পাকাতে চাইছে।
নন্দীগ্রাম ছাড়াও কাঁথি, কেশপুর প্রভৃতি অঞ্চল নিয়েও আশঙ্কা করছেন অনেকে।