ডোকরা থেকে কাঁথা সেলাই: লালবাজারের শিল্পকলা জয় করলো কলকাতার মন

লালবাজারের উত্থানের গল্প
একসময় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত লালবাজার, আজ পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামের কাছে অবস্থিত এই ছোট্ট আদিবাসী গ্রামটি শিল্পের মাধ্যমে বিশ্বসংযোগ স্থাপন করেছে। এখানকার স্থানীয় শিল্পীরা বর্তমানে কলকাতার বিভিন্ন শিল্প উৎসবে অংশগ্রহণ করে তাদের প্রতিভা প্রদর্শন করছেন।

২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল পরিবর্তনের যাত্রা
২০১৮ সালে কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্টস কলেজের স্নাতক মৃণাল মণ্ডল ঐতিহ্যবাহী শিল্প খুঁজতে গিয়ে লালবাজারে আসেন। গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি এটি নিজের দ্বিতীয় ঘর বানিয়ে ফেলেন। চিত্রশিল্পীদের উদ্যোগ চালচিত্র একাডেমির সহায়তায় তিনি এখানকার মানুষদের জন্য শিল্প প্রশিক্ষণ শুরু করেন।

কলকাতার শিল্প উৎসবে লালবাজারের সাফল্য
২০২৪ সালের শেষে লালবাজারের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে। প্রথমত, ভারতীয় মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত “ফ্রম ফিল্ডস টু ফোক: এ জার্নি থ্রু রুরাল হেরিটেজ” প্রদর্শনীতে ডোকরা এবং কাঠের হস্তশিল্প প্রদর্শন করা হয়। দ্বিতীয়ত, তারা অংশগ্রহণ করে বেহালা আর্ট ফেস্টে, যেখানে লালবাজারের সাতজন নারী শিল্পী দুটি দেয়াল চিত্রায়িত করেন।

লালবাজারের ৯ বছরের ছোট্ট শিল্পী চন্দনা মাহাতো বলেন, “বড়ো রাস্তা, বড়ো গাড়ি, বড়ো বিল্ডিং দেখে আমরা অভিভূত।” অন্যদিকে, শিল্পী সুমি কিস্কু বলেন, “আমাদের কাজ এত প্রশংসা পেয়েছে, যা আমাদের অনেক বেশি উৎসাহ দিয়েছে।”

গ্রাম থেকে স্বপ্নগ্রামে রূপান্তর
লালবাজার এখন পরিচিতি পেয়েছে “খোয়াবগাঁও” (স্বপ্নগ্রাম) নামে। গ্রামের মানুষ এখন কুটুম-কাটুম (ডালপালা দিয়ে হস্তশিল্প), ডোকরা, কাঁথা সেলাই, মৃৎশিল্প এবং দেয়াল চিত্রকলায় দক্ষ। এখন বহু পর্যটক ঝাড়গ্রামে আসার সময় লালবাজারে এসে স্থানীয় শিল্পকর্ম কেনেন, যা গ্রামবাসীদের আয়ের অন্যতম উৎস।

মৃণাল মণ্ডলের পরিকল্পনা
মৃণাল মণ্ডল বলেন, “খোয়াবগাঁও এখন একটি বড় প্রকল্প। আমরা পশ্চিমবঙ্গের আরও ১২টি গ্রামকে এই রূপান্তরের আওতায় আনতে চাই। কনেদোবা গ্রামে কাজ চলছে। কলকাতার উৎসবে অংশগ্রহণ আমাদের কাজের স্বীকৃতি এবং উৎসাহ জুগিয়েছে।”

ghanty

Leave a comment