আসানসোল : বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্পিরিট কোম্পানি ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেড (United Spirits Limited), যা ডিয়াজিওর একটি সহায়ক সংস্থা, বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছে। আসানসোলের কুমারপুরে অবস্থিত এই মর্যাদাপূর্ণ মদ প্রস্তুতকারক কারখানায় গত সাত মাস ধরে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে কোম্পানিটি শুধু কারখানা চত্বরে তালা ঝুলিয়েই থেমে থাকেনি, বরং সমস্ত যন্ত্রপাতি, মদের বোতল, লেবেল এবং অন্যান্য সরঞ্জামও সরিয়ে নিয়েছে।

শ্রমিকদের জীবিকার ওপর বড় সংকট
বর্তমানে কারখানায় ১৪৫ জন স্থায়ী এবং ১১০ জন অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু অস্থায়ী শ্রমিকরা সাত মাস ধরে কোনো বেতন পাননি, যার ফলে তারা মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। স্থায়ী শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন, তবে শ্রমিকদের আশঙ্কা, কোম্পানি শুধুমাত্র তাদের শান্ত রাখার জন্যই বেতন দিচ্ছে।
এক শ্রমিকের অভিযোগ,
“আমরা এখানে বছরের পর বছর কাজ করছি। কিন্তু এখন প্রবন্ধন আমাদের কোনো তথ্য না দিয়েই কারখানা বিক্রির পরিকল্পনা করছে।”

রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিবাদ, কারখানা বাঁচানোর দাবি
কারখানার এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রথমবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে কারখানাটি বাঁচানোর দাবি জানিয়েছে। বুধবার শ্রমিকরা সিআইটিইউ (CITU)-র ব্যানারে প্রতিবাদে সামিল হন এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন।
সিআইটিইউ নেতা মুক্তেশ্বর বাউড়ি বলেন,
“মোদি সরকার দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি করছে, আর মমতা সরকার শিল্প উন্নয়নের কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলায় একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদি সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন।”

কংগ্রেস নেতা প্রসনজিত পইতুণ্ডি সরকারের সমালোচনা করে বলেন,
“যখন সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি কোম্পানিকে বিনিয়োগে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, তখন কেন আগের থেকে থাকা কারখানাগুলিকে বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে না?”
বিজেপি নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখার্জি মমতা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে বলেন,
“মমতা ব্যানার্জির সরকার যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলায় শিল্পোন্নয়ন সম্ভব নয়। যদি এই কারখানা বন্ধ হয়, তবে হাজার হাজার শ্রমিকের পরিবার অভুক্ত অবস্থায় পৌঁছে যাবে।”

কারখানা কি আবার চালু হবে?
ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেডের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে কোম্পানিটি শীঘ্রই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারখানা বিক্রির জল্পনা বাড়ছে, যা শ্রমিকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলি এর বিরুদ্ধে বৃহৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেড বন্ধ হয়, তবে এটি বাংলার শিল্পপতনের আরও একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। প্রশ্ন হলো, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার কি সময়মতো এই মর্যাদাপূর্ণ কারখানাটিকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ নেবে, নাকি এটি ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাবে?