আসানসোল: সেল বার্নপুরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। অভিযোগ উঠেছে, আসানসোল পুরনিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর আশোক রুদ্র হিন্দিভাষী শ্রমিকদের হুমকি দিয়েছেন এবং ভাষাগত বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি এখন রীতিমতো রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কে পরিণত হয়েছে।
শুধু স্থানীয় হিন্দিভাষী সমাজ নয়, আশোক রুদ্রের এই মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন INTTUC-এর শীর্ষ নেতৃত্বও। সংগঠনের বর্ষীয়ান নেতা রাজু আহলুওয়ালিয়া সরাসরি রুদ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন,
“একজন কাউন্সিলরের কাজ হচ্ছে মানুষের উন্নয়ন ও সেবা করা, ভাষা বা জাতি নিয়ে বিভাজন তৈরি নয়। শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার অধিকার রয়েছে আমাদের জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক এবং রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের, স্থানীয় কাউন্সিলরের নয়।”
বিতর্কের সূত্রপাত, আশোক রুদ্র সেল বার্নপুরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে হিন্দিভাষী কর্মীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় প্রবল ক্ষোভে ফেটে পড়েছে স্থানীয় সমাজ। হিন্দিভাষী সমাজের নেতারা যেমন মদন চৌবে ও ওমনারায়ণ একত্রিত হয়ে এই ঘটনা ‘বিভাজনমূলক ও সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
রাজু আহলুওয়ালিয়া আরও বলেন,
“বার্নপুর ও আশপাশের এলাকায় সব ধর্ম, জাতি ও ভাষার মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিতে সহাবস্থান করে আসছেন। এই সম্প্রীতি নষ্ট করার কোনও চক্রান্ত বরদাস্ত করা হবে না।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, “ভিতরের-বাইরের নামে শ্রমিকদের ভাগ করার চেষ্টা কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া হবে না।”
এই বিতর্কের জেরে তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরেই মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। একদিকে দলের একজন জনপ্রতিনিধি একটি ভাষা-ভিত্তিক গোষ্ঠীকে নিশানা করছেন, অন্যদিকে দলেরই শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব তার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ঘটনার ফলে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন আরও প্রকাশ্যে আসছে।
এদিকে সাধারণ নাগরিকদের একাংশ বলছে, এই ধরনের মন্তব্য ও কার্যকলাপে এলাকায় অশান্তি ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি উঠেছে।
এই বিতর্ক এখন একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে—
“ভোট ব্যাংকের জন্য কি সমাজে ভাষা, জাতি ও প্রদেশ ভিত্তিক বিভাজনকেই হাতিয়ার করছে কিছু জনপ্রতিনিধি?”
এভাবে চলতে থাকলে সমাজের ঐক্যবদ্ধ চিত্র একদিন পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনেরা।
সবশেষে, এখন নজর রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব ও প্রশাসনের দিকে—
“কি পদক্ষেপ নেয় দল? আশোক রুদ্রের বিরুদ্ধে কি দলগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, নাকি অন্যান্য বিতর্কের মতোই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাপা পড়ে যাবে ঘটনাটি?”
উত্তর দেবে সময়।