আসানসোল: পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই শিল্পাঞ্চল আসানসোলে রাজনৈতিক উত্তাপ এমনভাবে বাড়ছে যে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কয়লা–বালি পাচার নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির সংঘর্ষ এখন সরাসরি রাস্তায়। অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগে কমিশনারেট পুলিশও কঠিন পরীক্ষার মুখে।
🔥 তিরাটে তীব্র উত্তেজনা – অগ্নিমিত্রা পালকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ
বুধবার সন্ধ্যেবেলা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিজেপির আসানসোল দক্ষিণের বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল ‘পাড়ায়–পাড়ায় দিদিভাই’ প্রচারে তিরাট এলাকায় পৌঁছন। অভিযোগ, সেই সময় স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য সুধীর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

অগ্নিমিত্রার গাড়ি ঘিরে ধরা হয়, CISF-এর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয় বলে দাবি বিজেপির।
গ্রামবাসীদের উসকে বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগও করেন বিধায়িকা।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়—
- বিধায়িকার গাড়ির সামনে বসে প্রতিবাদ করছে বহু মহিলা
- একদল যুবক বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে, পুলিশকে ঠেলাঠেলি করা হচ্ছে
- দুই দলের মধ্যে তর্কাতর্কিতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে
পুলিশ পরিস্থিতি সামলানোর পরে অগ্নিমিত্রা তাঁর দলবল নিয়ে কালি পাহাড়ি মোড়ে পৌঁছন। সেখানে প্রথমে জাতীয় সড়ক, পরে GT রোড দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থাকে।
🗯 অগ্নিমিত্রা পালের বিস্ফোরক অভিযোগ – “বালি পাচার বন্ধ করেছি বলেই এই আক্রমণ”
বিজেপি বিধায়িকার তীব্র অভিযোগ—
- “তৃণমূল ক্যাডারদের দিয়ে গাড়ি আটকে নাটক করা হয়েছে।”
- “বালি পাচার বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
- “পুলিশ সম্পূর্ণভাবে তৃণমূলের নির্দেশে চলছে।”
- “এখন থেকে তৃণমূল বিধায়কদেরও ঘিরে ধরা হবে।”
তিনি আরও বলেন—
“রাজ্যজুড়ে শিক্ষা–স্বাস্থ্য–রেশন—প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির পাহাড়। হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহের চোখ বিক্রি হচ্ছে, নবজাতক কেনাবেচা হচ্ছে—এটাই তৃণমূলের শাসন।”
🔥 তৃণমূল জেলা সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর পাল্টা আক্রমণ – “বিজেপি MLA-এর সঙ্গে কয়লা মাফিয়া!”
পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূল জেলা সভাপতি ও পাণ্ডবেশ্বরের MLA নরেন চক্রবর্তী বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন:
- “CISF-এর নাম করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো হয়েছে।”
- “অগ্নিমিত্রা মানুষের সঙ্গে নেই। চার-সাড়ে চার বছর গায়েব ছিলেন।”
- “MLA তহবিলের টাকা উন্নয়নে খরচ করেননি।”
- “তিনি শুধু TRP-এর জন্য নাটক করছেন।”
- “আমাদের কাছে প্রমাণ আছে—তিনি দুই জন কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে ঘুরছিলেন।”
তিনি আরও বলেন—
“কালি পাহাড়ি মোড় অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। যদি বালি পাচার হয়, FIR দিক। কেন দিচ্ছেন না?”
⚠ রাজনৈতিক ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দুতে কমিশনারেট পুলিশ—তোলপাড় প্রশ্ন
এবার প্রশ্ন উঠছে পুলিশকে ঘিরে—
- তৃণমূলের হাতে যদি ছবিসহ প্রমাণ থাকে, তাহলে কি পুলিশকে লিখিত অভিযোগ দেবে?
- পুলিশ কি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করবে?
- অন্যদিকে, অগ্নিমিত্রার বালি পাচারের অভিযোগে পুলিশ কী পদক্ষেপ নেবে?
এখনও পর্যন্ত কমিশনারেট পুলিশের কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি সামনে আসেনি।
🏭 শিল্পাঞ্চলের ‘ইনসাইড স্টোরি’ — কয়লা–বালি ইস্যুতে আগুনে ঘি
গত কয়েক মাসে আসানসোল–দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল বারংবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে—
- প্রথমে ED-এর বালি পাচার রেইড
- এরপর ED-এর ৪৪ জায়গায় একযোগে অভিযান—১৪ কোটি নগদ, স্বর্ণ, নথি উদ্ধার
- কেডি-এলবি নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ে
- পুরোনো কয়লা পাচার মামলায় সিবিআই স্পেশাল কোর্টে শুনানি চলছে
- সম্প্রতি অগ্নিমিত্রা পাল নিজে দমরা–দামোদর নদ ঘাটে অভিযুক্ত বালি লরি আটক করেন
সব মিলিয়ে পরিষ্কার—
আগামী নির্বাচনের মূল ইস্যু হতে চলেছে কয়লা–বালি পাচার।
এবং সেই আগুনে আজ তিরাটের অশান্তি যেন কেবল শুরু।












