পুলক দেবনাথ: আমি গান্ধীজি, নেতাজি কাউকেই দেখিনি। তবে আমার জীবদ্দশায় এমন একজন নেতাকে দেখেছি, যাঁর ডাকে একটা দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর বজ্রঘোষণা, বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলার স্টাইল, আবেগ সবকিছুই আমার হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। হতে পারে তাঁর শাসন নিয়ে বিতর্ক। কিন্তু তাঁর দেশপ্রেমে কোনও ভেজাল ছিল বলে কখনও মনে হয়নি। তিনি দুই বাংলার জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
কিন্তু আন্দোলনের নামে বাংলাদেশে যেভাবে স্বাধীনতার চিহ্নগুলি মুছে দেওয়ার চেষ্টা হল, তা অতীব বেদনার। ছোটবেলায় এপারে বসেই মুক্তিযুদ্ধের আঁচ অনুভব করেছি। রেডিওতে শুনেছি শেখ মুজিবর রহমানের সেই জ্বালাময়ী ভাষণ— ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।… আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।… অনেক রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজনে আরও দেব। তবু এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লা।’
শেখ হাসিনার পতনের পর সেই শেখ মুজিবের মূর্তিতে জুতোর মালা পরানো হয়েছে, মূর্তি ভাঙা হয়েছে নির্দয় ভাবে। ১৯৭১ সালে ঢাকার বত্রিশ নম্বর ধানমণ্ডির যে বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনারা শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিল এবং স্বাধীন বাংলাদেশে যেখানে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করেছিল কিছু ক্ষমতালোভী সেনা অফিসার, সেই বাড়িটি পরবর্তীতে মুজিব সংগ্রহশালা হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। আমি সেই বাড়িতে গিয়ে নানা স্মৃতিচিহ্ন দেখেছিলাম। সেই বাড়িটি দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর করেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে।
অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁকে নিয়ে গান বাঁধা হয়েছিল—‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি আকাশে, বাতাসে ওঠে রণি..’ সেই গান সেসময় দুই বাংলায় আলোড়ন তুলেছিল। তা শুনে উজ্জীবিত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেই শেখ মুজিবের এই করুণ পরিণতি! না, মেনে নিতে পারছি না। এই তো সেদিন ঘটা করে পালিত হল তাঁর শতবর্ষের জন্মদিন। তাঁকে নিয়ে তৈরি ছবিটি কলকাতার একটি হলে বসে দেখেছিলাম। এত অল্প সময়ের মধ্যে এমন অকৃতজ্ঞ পরিবর্তন? মুক্তিযোদ্ধাদের মূর্তির ওপর উঠে সে কী বেলেল্লাপনা! এ কোন বাংলাদেশ? একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীরা কি আসরে নেমে পড়েছে?