আসানসোল:
আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ডামরা এলাকায় সোমবার অনুষ্ঠিত হলো বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দ্বিতীয় জনসভা। এই সভার নাম দেওয়া হয় ‘পরিবর্তন সংকল্প সভা’। সভায় বিপুল সংখ্যক বিজেপি কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়।
সভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি, কুলটি বিধায়ক ডা. অজয় পোদ্দার, আসানসোল দক্ষিণের বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল, বিজেপির রাজ্য সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় সহ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা ও কর্মীরা।
“বাংলায় পরিবর্তন চাইলে হিন্দুদের এক হতে হবে”
সভামঞ্চ থেকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,
“বাংলায় যদি সত্যিই পরিবর্তন আনতে হয়, তবে সমস্ত হিন্দুকে একজোট হতে হবে। হিন্দুরা যদি এক হয়ে ভোট দেন, তাহলে বিজেপিকে ক্ষমতায় আসা থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।”
তিনি দাবি করেন, আগামী চার মাসের মধ্যেই সমস্ত অন্যায়ের হিসাব নেওয়া হবে এবং ২০২৬ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
কয়লা-বালু মাফিয়া ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তোপ
শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বক্তব্যে কয়লা ও বালু মাফিয়াদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান। তিনি অভিযোগ করেন, শাসক দলের মদতে গোটা রাজ্যে বেআইনি সিন্ডিকেট চলছে এবং সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না, তাঁরা আজ বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন—এটাই প্রমাণ করে কতটা গভীর দুর্নীতি চলছে।
কলকাতার ‘মেসি ইভেন্ট’ নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ
কলকাতায় অনুষ্ঠিত মেসি সংক্রান্ত অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী একে ৩৫০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি বলে আখ্যা দেন।
তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূল নেতারা অরূপ চক্রবর্তী ও সুজিত বসু ২২ হাজার টিকিট সংগ্রহ করে তা দলীয় নেতা ও ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বিলি করেন এবং কিছু টিকিট বিক্রিও করা হয়।
তিনি বলেন, “হায়দরাবাদ, মুম্বই, দিল্লিতে অনুষ্ঠান সফল হলেও কলকাতায় ব্যর্থ হয়েছে—এটা বাংলা ও কলকাতার জন্য লজ্জার।”
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অরূপ বিশ্বাস ছিলেন না।”
নারী নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ
শুভেন্দু অধিকারী আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও দুর্গাপুর মেডিক্যাল কলেজে নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলির উল্লেখ করে বলেন, বাংলার নাম দেশজুড়ে কলঙ্কিত হয়েছে।
তিনি জানান, ওড়িশা থেকে আসা এক তরুণীর বাবা স্পষ্টভাবে বলেছেন—তিনি আর তাঁর মেয়েকে বাংলায় রাখতে চান না, কারণ বাংলা মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়।
জেলার তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ
জেলার তৃণমূল নেতৃত্বকে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনির একাধিক নেতা ও মন্ত্রীরা ক্ষমতায় এসে জনগণের অর্থ লুট করে নিজেদের জীবনযাত্রা বদলে ফেলেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মলয় ও যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে আঁতাত করে সাধারণ মানুষের টাকা লুট করা হয়েছে।
নগর নিগমে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অগ্নিমিত্রা পালের
আসানসোল দক্ষিণের বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল বলেন,
আসানসোল নগর নিগমে অস্থায়ী কর্মীদের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কাটা হলেও তা তাঁদের পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে না—যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা পেনশন পাচ্ছেন না এবং ঠিকাদাররা নগর নিগমে কাজ করতে আগ্রহী নন, কারণ টেন্ডারের সময় উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের অযৌক্তিক চাপের মুখে পড়তে হয়।











