পুলক দেবনাথ: যা আশঙ্কা করেছিলাম, তাই হল। শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন। বরং বলা ভালো পালিয়ে বেঁচেছেন। সেনাবাহিনীর সাহায্যেই তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে পেরেছেন। তারা হয়তো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বার্থে এই পথ নিয়েছে। আবার শেখ হাসিনা জেদ ধরে বাসভবনে থেকে গেলে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারত।শ্রীলঙ্কায় গণ অভ্যুত্থানের মতো এদিন পিলপিল করে মানুষ ঢুকে পড়েছে গণভবনে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। একটা নৈরাজ্য লক্ষ করা গিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে বলে ঘোষণা করেছেন। এই সরকারে কারা থাকবে, তাদের নীতি কী হবে, সেটাই এখন দেখার।
তবে গোটা ঘটনায় শেখ হাসিনা এতটাই হতাশ যে তিনি আর রাজনীতিতে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
তবে হাসিনার পদত্যাগে এদিন আন্দোলনকারীরা-সহ হাজার হাজার মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়েছেন। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগের এই করুণ পরিণতি হল কেন?
অনেকে বলছেন, বিএনপি-জামাত ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়ায় এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে সুযোগ নিতেই পারে। আসলে শেখ হাসিনা সরকারের জনভিত্তিই টলে গিয়েছিল, যা এই আন্দোলন দমাতে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামি লিগ, ছাত্র লিগের কর্মীদের নামিয়েও সুবিধা না করতে পারাতেই বোঝা গিয়েছে। শাসকদলের নেতা-কর্মীদের দাদাগিরি, জোরজুলুম, ব্যাপক দুর্নীতিতে সাধারণ মানুষ রুষ্ট হয়ে পড়েছিল। তাই শেখ হাসিনা জনগণকে রুখে দাঁড়াতে বললেও তেমন সাড়া মেলেনি। বহু আওয়ামি লিগ নেতা-কর্মী হতাহত হয়েছেন, তাঁদের বাড়ি, অফিস, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে ভারতকে সতর্ক থাকতেই হবে। কারণ প্রতিবেশী দেশের প্রভাব পড়তেই পারে আমাদের দেশে। শেখ হাসিনার জমানায় দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ক্রমশ জোরদার হয়েছিল, যা অন্যদের চক্ষুশূল ছিল। কিন্তু এখন হাসিনাবিহীন বাংলাদেশের ভারত নীতি কী হবে, তা দেখার। হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিলে বাংলাদেশে তার কী প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে, সেটাও দেখার। তবে তিনি লন্ডন চলে যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। চিন বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে বরাবরই তৎপর। পাকিস্তান তো তার পুরোনো অংশের দিকে শ্যেনদৃষ্টিতে চেয়েই আছে। এই সময় ভারতের চিন্তা বেড়ে গেল তো বটেই। বিশেষত জঙ্গিরা আবার বাংলাদেশে আশ্রয় পাবে কি না, সেই আশঙ্কা রয়েছে।