জঙ্গলমহলে সিঁদুরে মেঘ! আদিবাসীদের এনিউমারেশন বয়কট ঘিরে রাজনৈতিক তোলপাড়

single balaji

পুরুলিয়া:
জঙ্গলমহলে কি আবার ধীরে ধীরে ফিরে আসছে মাওবাদী ছায়া? রাজ্যজুড়ে যখন স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা SIR প্রক্রিয়া চলছে, তখন পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকের একাধিক গ্রামে এনিউমারেশন ফর্ম পূরণে অনীহা নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসন ও শাসক দলের অন্দরে।

বান্দোয়ান এলাকার সিংহভাগ বাসিন্দা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এই এনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করবেন না। তাঁদের দাবি, তাঁরা নিজেদের একটি আলাদা ‘মাঝি সরকার’-এর আওতাভুক্ত মনে করেন। স্বাধীনতার আগেও তাঁরা নাকি ভিন্ন শাসন ব্যবস্থার অধীনে ছিলেন—এই যুক্তিতেই প্রশাসনের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের একাংশ।

এর আগেও বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের রাউতাড়া পঞ্চায়েতের মুচিকাটা গ্রামের ডুংরিডিটোলা এলাকায় একই ছবি ধরা পড়েছিল। সেখানকার বাসিন্দারাও জানিয়েছিলেন, তাঁরা ‘সমাজবাদ অন্তরাষ্ট্রিয় মাঝি সরকার’-এর কার্ডধারী, তাই নতুন করে ফর্ম পূরণ করবেন না।

এই পরিস্থিতিকে ঘিরে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস সরাসরি মাওবাদী প্রভাবের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। তৃণমূলের এসটি সেলের জেলা সভাপতি ও ট্রাইবাল ডেভলপমেন্ট কালচারাল বোর্ডের সদস্য গঙ্গারাম মুর্মু স্পষ্ট বলেন,
“এটা গভীর ষড়যন্ত্র। ভালোভাবে মগজধোলাই করা হয়েছে। ২০০৩ সালে ঝাড়খণ্ডে সার চলাকালীনও এভাবে হাজার হাজার আদিবাসী ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।”

তিনি আরও জানান, অতীতে এই জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সক্রিয়তা ছিল এবং বর্তমান ঘটনার ধরন সেই ছবিকেই মনে করাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথাও তিনি ঘোষণা করেছেন।

উদ্বেগ আরও বেড়েছে বান্দোয়ানের বিভিন্ন গ্রামে লাগানো সাঁওতালি ভাষার বোর্ড ঘিরে। সেই বোর্ডে লেখা—
“আমাদের দেশ, আমাদের রাজত্ব”
এই স্লোগান প্রশাসনের সন্দেহ আরও ঘনীভূত করেছে।

যদিও গোটা বিষয়টিকে ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মুচিকাটা ডুংরিডিটোলার বাসিন্দা সুনীল মুর্মু। তাঁর দাবি,
“মাঝি সরকারের বিষয়টি সংবিধানস্বীকৃত। আমরা শুধু আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষকে সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছি।”

বান্দোয়ানে মাঝি সরকারের ফর্ম পূরণের কাজে যুক্ত বিপিনবিহারী বাস্কে-ও বলেন,
“অতীতে এখানে মাওবাদী কার্যকলাপ ছিল ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে এই ফর্ম পূরণের কোনও সম্পর্ক নেই।”

তবে বিষয়টি এতটাই স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে যে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে এই তৎপরতার পিছনে ওডিশা ও ছত্তিশগড়ের যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়,
“মাওবাদী উপস্থিতি নিশ্চিত নয়, কিন্তু কেউ না কেউ সংগঠিত ভাবে বিষয়টি চালাচ্ছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সব মিলিয়ে এনিউমারেশন ফর্মকে কেন্দ্র করে এখন উত্তপ্ত গোটা জঙ্গলমহল। ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় এই ধরনের বাধা গণতন্ত্রের জন্য কতটা বিপজ্জনক, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জোরালোভাবে।

ghanty

Leave a comment