সিবিআই’র ব্যর্থতায় বিক্ষোভের ঝড়, অভিযুক্তদের জামিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

কলকাতা: গত ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে আর.জি.কার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক তরুণ চিকিৎসকের গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর কলকাতায় আবারও বিক্ষোভের ঝড় উঠেছে। জামিনপ্রাপ্ত দুই অভিযুক্ত হলেন সাসপেন্ড টালা পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইনচার্জ (OC) অভিজিত মণ্ডল এবং প্রাক্তন আর.জি.কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।

বিক্ষোভের ঢেউ

গত ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, শনিবার চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট (WBJDF)-এর নেতৃত্বে চিকিৎসকরা একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিলটি করুনাময়ী থেকে শুরু হয়ে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত যায়, যেখানে সিবিআই-এর অফিস অবস্থিত।

মিছিলে অংশগ্রহণ করেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। তাঁরা সিবিআই-এর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যতদিন মানুষ রাস্তায় ছিল, সিবিআই ঠিকভাবে কাজ করছিল। কিন্তু প্রতিবাদ বন্ধ হওয়ার পর সিবিআই তাদের কাজ করার জন্য ইচ্ছুক নয়।”

নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, “আমরা বিচারের জন্য রাস্তায় থাকতে হবে, আশা হারাবেন না, আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”

চিকিৎসকদের অভিযোগ

চিকিৎসকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে সিবিআই ৯০ দিন পরে কোনো চার্জশিট জমা না দেওয়ায় অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর করা হয়। দেবাশিস হালদার, WBJDF-এর এক সদস্য বলেন, “যদি সিবিআই-এর কাছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না থাকত, তাহলে কেন তাদের প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল?”

এফআইআর এবং আদালতের জামিন

শিয়ালদহ আদালত, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে জানিয়েছে যে অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়েছে। সাসপেন্ড টালা পুলিশ স্টেশন অফিসার ইনচার্জ অভিজিত মণ্ডল এবং প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে প্রমাণ প্রক্ষিপ্ত করার অভিযোগ ছিল। জামিনপ্রাপ্ত দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট জমা না দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত আসে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, “এই জামিনে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে কোনো ‘সেটিং’ হয়েছে।” এছাড়া এসইউসি (কমিউনিস্ট), কংগ্রেস এবং এসএফআই-এর কর্মীরা প্রতিবাদে অংশ নেন।

ফিরহাদ হাকিমের দাবি

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছেন যে আর.জি.কর মামলার তদন্ত সিবিআই-এর পরিবর্তে রাজ্য পুলিশকে হস্তান্তর করা উচিত। তিনি বলেন, “রাজ্য পুলিশ বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করেছে, কিন্তু আর.জি.কর মামলায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক খেলাচালনা হচ্ছে।”

অভিযুক্তদের জামিন ও আদালত প্রক্রিয়া

৮ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে আর.জি.কর হাসপাতালের একটি সেমিনার কক্ষে তরুণ চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় সেদিনই কলকাতা পুলিশ দ্বারা গ্রেপ্তার হন। সিবিআই ৭ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে রায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়, যেখানে ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগ করা হয়।

১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টকে জানায় যে তারা মামলায় একটি অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিতে যাচ্ছে, কিন্তু ৯০ দিনের মধ্যে সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিত মণ্ডল-এর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা না দেওয়ায় আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছে।

ghanty

Leave a comment