আসানসোল:
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে অবস্থিত ডিভিসি-র (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) মাইথন ড্যাম শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধারই নয়, বরং একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রও বটে। সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও ডিসেম্বর-জানুয়ারির পিকনিক মরসুমে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে এই ড্যামের নিরাপত্তা ও কাঠামোগত সুরক্ষা প্রশাসনের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বর্তমানে মাইথন ড্যামের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে সিআইএসএফ-এর হাতে। এবার সেই নিরাপত্তাকে আরও মজবুত করতে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ডিভিসি-র চেয়ারম্যান এস. সুরেশ কুমার-এর নির্দেশে কানাডা ও জার্মানি থেকে আগত ছয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল মাইথনে এসে অত্যাধুনিক এআই-সজ্জিত ড্রোন ব্যবহার করে ড্যামের স্ট্রাকচারাল সেফটি সার্ভে শুরু করেছে।
জার্মানির একটি এরিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংস্থা এবং কানাডার একটি ইন্সপেকশন সফটওয়্যার সংস্থার বিশেষজ্ঞরা মিলিয়ে একাধিক এআই-ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে ড্যামের চারপাশ ও মূল কাঠামো খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছেন। এই সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো—ড্যামের কোথাও কোনও ফাটল, দুর্বল অংশ বা কাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে কি না তা আগেভাগেই শনাক্ত করা।
এই আন্তর্জাতিক টিমে রয়েছেন ভারতীয় এআই বিশেষজ্ঞরাও। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কানাডার সার্ভেয়র টার্নার গুলিকসন জানান, ডিভিসি তাঁদের মাইথন ড্যামের পাশাপাশি পাঞ্চেত ও কোনার ড্যাম-এরও নিরাপত্তা সমীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে। প্রথম দিনেই মাইথন ড্যাম দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, পর্যায়ক্রমে বাকি ড্যামগুলির সমীক্ষাও করা হবে।
সমীক্ষার মাধ্যমে ড্যামের কাঠামো আর কতদিন নিরাপদ থাকবে, তার একটি বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন করা হবে। যদি কোথাও সংস্কার বা উন্নয়নের প্রয়োজন দেখা যায়, তাহলে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট ডিভিসি-র কাছে জমা দেওয়া হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে ড্যামের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।
টার্নার গুলিকসন আরও জানান, কানাডায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই এআই-ভিত্তিক ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে ড্যামগুলির নিরাপত্তা পরীক্ষা করে আসছেন। এতে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক আগেই ধরা পড়ে। কোনও ত্রুটি শনাক্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে ডিভিসি-কে জানানো হবে, যাতে দ্রুত মেরামতি ও পুনর্গঠনের কাজ করা যায়।
এই সমীক্ষা দলে রয়েছেন টার্নার গুলিকসন, আর্টেম শেভচেঙ্কো, কুঞ্জন প্যাটেল, রাহুল মাকওয়ানা, হেমন্ত দেশাই এবং আর্ট টাম। প্রশাসনিক মহলের মতে, এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মাইথন ড্যামের নিরাপত্তা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে।











