কলকাতা:
রবিবার গোটা কলকাতা সাক্ষী থাকল এক ঐতিহাসিক ধর্মীয় মহাযজ্ঞের। সনাতন সংস্কৃতি সংসদের উদ্যোগে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হল সর্ববৃহৎ গণ-গীতা পাঠ অনুষ্ঠান। এই মহাযজ্ঞে অংশ নেন বাগেশ্বর ধামের পীঠাধীশ্বর ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ শাস্ত্রী, পদ্মভূষণ প্রাপক সাধ্বী ঋতম্ভরা, রাজ্যপাল ড. সি ভি আনন্দ বোস, জ্ঞানানন্দজি মহারাজ, কার্তিক মহারাজ-সহ লক্ষাধিক সাধু, সন্ন্যাসী, ভক্ত ও সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শ্যামিক ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, তথাগত রায়, রাহুল সিনহা, লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল প্রমুখ শীর্ষ নেতৃত্ব।

সকাল থেকেই জনসমুদ্র, শঙ্খধ্বনিতে মুখর ব্রিগেড
রবিবার সকাল থেকেই ব্রিগেড ময়দানে শুরু হয় মানুষের ঢল। বেলা বাড়তেই সেই ভিড় রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সর্বত্র শঙ্খধ্বনি, ঢাক, খোল, করতালের তালে তালে নৃত্যে মেতে ওঠেন সনাতনী ভক্তরা। বেদ পাঠের পর সমবেতভাবে গীতা পাঠে অংশ নেন লক্ষাধিক মানুষ। গোটা ব্রিগেড যেন গেরুয়া পতাকায় ঢেকে যায়।
এই বিশাল আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন মহামণ্ডলেশ্বর স্বামী জ্ঞানানন্দজি মহারাজ।
রাজ্যপাল গীতার বাণী নিয়ে বললেন কর্মযোগের কথা
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে রাজ্যপাল ড. সি ভি আনন্দ বোস নিজে গীতার বাণী শ্রবণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের সংলাপের প্রসঙ্গ তুলে বলেন,
“যুদ্ধক্ষেত্রের বিভ্রান্ত অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ যেমন কর্মের পথ দেখিয়েছিলেন, আজ তেমনই বাংলা কাজ করার জন্য প্রস্তুত। আজকের প্রজন্ম যখন গীতা পাঠ করতে এগিয়ে আসছে, তখন তা জাতীয় গর্বের বিষয়।”
তিনি একইসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কণ্ঠ উঁচু করেন।

গীতা রাজনীতির ঊর্ধ্বে: সুকান্ত মজুমদার
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন,
“গীতা কখনও ভোটের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে, গীতা চিরকাল থাকবে। তবে গতকালের কিছু ঘটনায় হিন্দু ভোট ভাঙা ও মুসলিম ভোট এক করার চক্রান্ত স্পষ্ট।”
৫ লক্ষ মানুষের গীতা পাঠ, দাবিও সংগঠকদের
অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক কার্তিক মহারাজ জানান,
“প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ একসঙ্গে গীতা পাঠে অংশ নিয়েছেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ১ম, ৯ম ও ১৮তম অধ্যায় পাঠ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সনাতন ধর্মের মূল দর্শন ও গীতার সার্বজনীন বার্তা বুঝতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন,
“গীতা শুধু হিন্দুদের জন্য নয়, ১৪০ কোটি ভারতবাসীর জন্য। এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য বাংলার আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য জাগ্রত করা এবং সমাজে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, লোকসভা নির্বাচনের আগেও ব্রিগেডে এক লক্ষ মানুষের গীতা পাঠ হয়েছিল। এবার ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবং মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘটনার ঠিক পরদিন এই অনুষ্ঠান হওয়ায় রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বাগেশ্বর বাবার গর্জন, সাধ্বী ঋতম্ভরার আহ্বান
বাগেশ্বর ধামের ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ শাস্ত্রী মঞ্চ থেকে বলেন,
“হিন্দু যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। এই দেশ বাবরের নয়, রঘুবরের।”
তিনি মঞ্চ থেকেই বাংলায় বলেন,
“কেমন আছো কলকাতা? আমি তোমাদেরই একজন। আজ কলকাতার পাতায় পাতায় গেরুয়ার পতাকা উড়ছে। কালীভূম আজ গীতার মহাযজ্ঞে ধন্য।”
সাধ্বী ঋতম্ভরা তাঁর বক্তব্যে বলেন,
“কাশ্মীর থেকে কান্যকুমারী, কচ্ছ থেকে সুন্দরবন— সর্বত্র হিন্দুর দেশ গঠনের ধ্বনি উঠুক।”












