বরাকার : রবিবার দুপুর থেকেই বরাকার নদীর ঘাট উপচে পড়েছিল নারী-পুরুষের ভিড়ে। দূরদূরান্ত থেকে আসা শত শত মহিলা ও তাদের পরিবার সদস্যরা অংশ নেন বিখ্যাত জিতিয়া বা জীবিতপুত্রিকা ব্রত পালনে। এদিন বারাকার নদীর ঘাটে স্নান করে মায়েরা জলবিহীন উপবাসে কাটিয়ে দেন সারাদিন, ছেলেদের দীর্ঘ জীবন কামনায় করেন বিশেষ পূজা।
প্রাচীন শাস্ত্র মতে, জিতিয়া ব্রতের তিনটি প্রধান কাহিনী সবচেয়ে জনপ্রিয়। প্রথমটি শিয়াল ও চিলহো পাখির কাহিনী, যেখানে উপবাস ভঙ্গ না করায় একজীবনে আশীর্বাদ পাওয়া যায়। দ্বিতীয়টি গন্ধর্বরাজ জিমূতবাহনের গল্প—যিনি গরুড়ের হাতে সাপদের বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। তৃতীয়টি মহাভারতের যুগ থেকে নেওয়া—অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্ত্র থেকে উত্তরার গর্ভস্থ শিশুকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁচানোর অলৌকিক কাহিনী। এই তিনটি কাহিনী শুনে মায়েরা ব্রতের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেন এবং প্রার্থনা করেন সন্তানদের সুরক্ষার জন্য।
এদিন নদীঘাটে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও ব্রত কমিটির সদস্যরাও। তাঁরা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্রতের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেন। অনেক মহিলা জানান, এই ব্রত শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং মা ও সন্তানের আবেগের এক অনন্য বন্ধন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মহিলা জলবিহীন উপবাস করেছেন। ঘাট জুড়ে শঙ্খধ্বনি, ধূপ-ধুনো আর কীর্তনের সুরে এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। অনেকে সন্তানদের নাম লিখে কাঁথা বা লাল ওড়না নদীতে ভাসান, যা এই ব্রতের বিশেষ রীতি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের আয়োজন গ্রামীণ সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে এবং আগামী প্রজন্মকে আমাদের লোককথা ও বিশ্বাসের সাথে পরিচয় করায়।