দুর্গাপুর প্রতিনিধি (দিলীপ সিংহ):
দুর্গাপুর ইস্পাত নগরী সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত। আইএনটিটিইউসি (INTTUC) শ্রমিক সংগঠনের শতাধিক শ্রমিক প্ল্যান্ট গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন। ম্যানেজমেন্ট ও কন্ট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে তারা স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন গোটা এলাকা।
শ্রমিকদের দাবি – ২৪০ দিন কাজ শেষ হওয়ার পর ফাইনাল পেমেন্টের সঙ্গে ১১% বোনাস দেওয়ার কথা, কিন্তু ঠিকাদাররা সেই নিয়ম মানছেন না। বরং, শ্রমিকদের অজান্তে ৮% বোনাস পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকরা।
শুধু তাই নয়, আরও বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকরা। কোম্পানির হিসাবপত্রে তাদের বেতন দেখানো হচ্ছে ১৮,০০০ টাকা, অথচ হাতে পাচ্ছেন মাত্র ৮,০০০ টাকা। “১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দাও” – ঠিকাদারদের এই চাপিয়ে দেওয়া শর্তে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ
শ্রমিক সংগঠনের নেতা সিকন্দর মালিক সরাসরি অভিযোগ করেন –
“ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শ্রমিকদের শোষণ করছে। বোনাস বকেয়া, বেতন বকেয়া, সব জায়গায় কারচুপি চলছে। আমরা যা পাওয়ার অধিকারী, তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”
একই সঙ্গে তিনি তৃণমূলের পূর্বতন ট্রেড ইউনিয়ন কমিটির প্রতিশ্রুতিগুলি আজ অমান্য করার অভিযোগও তোলেন।
“পুরোনো কমিটি আমাদের পাশে ছিল, নতুন কমিটি শুধু দালালি করছে”
শ্রমিক ইফরান অভিযোগ করেন –
“নতুন কোর কমিটির কোনো দায়িত্ব নেই। তারা না শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছে, না ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে, না ঠিকাদারের সঙ্গে। আগের কমিটি শ্রমিকদের জন্য লড়াই করত, আর এই কমিটি ম্যানেজমেন্টের দালালি করছে।”
তিনি আরও জানান, এই ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বকেও অবহিত করা হয়েছে।
কোর কমিটির প্রতিক্রিয়া
যখন কোর কমিটির সদস্য মানস অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তিনি জানান –
“আমরা ঘটনাস্থলে নেই, তবে শ্রমিকদের আন্দোলন সঠিক। আমরা তাদের সঙ্গে আছি। ইতিমধ্যেই ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। অনেক জায়গায় ১১% বোনাস দেওয়া হয়েছে, তবে কিছু জায়গায় ঠিকাদার অনিয়ম করছে। আমরা বিষয়টি উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
শ্রমিক অসন্তোষে বাড়ছে চাপ
এই আন্দোলন ঘিরে শ্রমিকদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শ্রমিকরা সতর্ক করেছেন, যদি দ্রুত সমস্যার সমাধান না হয় তবে আগামী দিনে আরও বড়সড় আন্দোলনের পথে হাঁটতে তারা বাধ্য হবেন।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা এদিন একত্রিত হয়ে জানিয়ে দেন – “আমাদের ঘামে তৈরি ইস্পাত দেশের উন্নয়নে লাগে, অথচ আমরা ন্যায্য বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত। এবার আর চুপ করে থাকা যাবে না।”