কলকাতা/আসানসোল:
জামুরিয়ার একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার সঙ্গে জড়িত মামলার শুনানির সময় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত (সিঙ্গেল বেঞ্চ) আসানসোল নগর নিগমের বিরুদ্ধে FIR দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত পৌর নিগমের ভূমিকা এবং অবৈধ নির্মাণের বিনিময়ে প্রাপ্ত বিপুল অর্থ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন।
হাইকোর্টে দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে জানা গেছে, জামুরিয়া এবং রানীগঞ্জ অঞ্চলের ১১টি বড় কারখানায় অনুমতি ছাড়াই অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। এই নির্মাণ নিয়ে দু’বছর আগেই আসানসোল নগর নিগমের পক্ষ থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, যেখানে বলা হয়, নির্মাণ না ভাঙলে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও নির্মাণ ভাঙা হয়নি, বরং পুরো ফোকাস ছিল জরিমানা আদায়ে।
জানা গেছে, নগর নিগমের আধিকারিকরা বুলডোজার নিয়ে কারখানায় পৌঁছলেও সেখানে নির্মাণ ভাঙার বদলে কেবল অর্থ আদায়েই ব্যস্ত থেকেছেন। এই জরিমানার পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে আদালত স্পষ্ট মন্তব্য করে বলেন,
“জরিমানা আদায় করলেই কি অবৈধ নির্মাণ বৈধ হয়ে যায়?”
বিচারপতি এই প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনি আখ্যা দিয়ে পৌর নিগমের নীরবতা ও ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন।
কারখানার মালিকদের অভিযোগ, নগর নিগমের কর্মীরা মৌখিকভাবে বলেন—জরিমানা দিলে নির্মাণ ভাঙা হবে না। কিন্তু, কোনও লিখিত নিশ্চয়তা দেয়নি পৌর নিগম, যার ফলে এক ধোঁয়াশার মধ্যে তারা রয়েছেন। লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হচ্ছে কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে তার নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি কড়া ভাষায় বলেন,
“এটা দুর্নীতির একটা নতুন মডেল। টাকা তোলার জন্যই এই নাটক চলছে। এর ফলে হাজার হাজার শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকির মুখে।”
পৌর নিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায় অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি কোনও আদালতের নির্দেশ বা FIR-এর বিষয়ে অবগত নন। তার দাবি, পৌর নিগম সব কিছু আইন মেনে করছে এবং প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
⚠️ উপসংহার:
কলকাতা হাইকোর্টের এই কড়া নির্দেশ এবং মন্তব্য আসানসোল নগর নিগমের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও কার্যপদ্ধতির ওপর বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল। ৫০০ কোটির বেশি টাকা কোথায় গেল, কেন নির্মাণ ভাঙা হয়নি, আর কতদিন চলবে এই ‘জরিমানা বাণিজ্য’—এই প্রশ্নগুলো এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও গুঞ্জন তৈরি করছে।
👉 আগামী দিনে এই মামলার রায় আরও বিস্ফোরক হতে পারে বলেই আইনজীবীরা মনে করছেন। এখন দেখার, আদালতের এই নজিরবিহীন পদক্ষেপ কীভাবে পাল্টে দেয় আসানসোলের প্রশাসনিক চিত্র।