আসানসোল/কলকাতা:
কয়লা বেল্ট ও শিল্পাঞ্চলে অবৈধ কয়লা ব্যবসার মাধ্যমে যারা একসময় ‘কয়লা রাজা’ হয়ে উঠেছিল, আজ তাদের সেই সাম্রাজ্য টলমল করছে। কালো হীরার জোরে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া কয়লা সিন্ডিকেটের গলায় এখন আতঙ্কের শুকনো কাঁটা। সামনে কি বড়সড় গ্রেপ্তার? কোন কোন প্রভাবশালী নাম উঠে আসবে? এমন প্রশ্নেই এখন তোলপাড় কয়লা বেল্ট।
অবৈধ কয়লা পাচার মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃত কয়লা পাচার চক্র ভাঙতেই শুরু হয়েছে তৃতীয় ও শেষ ধাপের অভিযান। এই পর্বে জোর দেওয়া হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেপ্তারের ওপর।
🔍 আট কয়লা ব্যবসায়ীকে তলব, সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার নির্দেশ
ইডি সূত্রে জানা গেছে, মোট আটজন কয়লা ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট সদস্যকে তলব করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—
- কৃষ্ণ মুরারি কায়াল ওরফে বিল্লু ওরফে কেকে
- নারায়ণ নন্দ ওরফে নরেন খারখা
- নীরদ বরণ মণ্ডল
সহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।
সবাইকে চলতি সপ্তাহেই কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দপ্তরে হাজির হতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইডি সূত্রের দাবি, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। একাধিক বিস্ফোরক নথি ও ডিজিটাল প্রমাণ ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে। তাই সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড ও অপারেটরদের জিজ্ঞাসাবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অসন্তোষজনক উত্তর মিললে যে কোনও মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
❓ পাঁচ দফায় জেরা, নজরে কারা?
ইডি সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের মূল ফোকাস থাকবে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে—
- কয়লা সিন্ডিকেটের সম্পূর্ণ কাঠামো, কাজের পদ্ধতি ও সদস্যদের নাম
- কারা কারা বিপুল অঙ্কের ‘প্রোটেকশন মানি’ নিয়েছে
- অভিযানে উদ্ধার হওয়া নথিপত্রের ব্যাখ্যা
- বাজেয়াপ্ত মোবাইল, ল্যাপটপ ও ডিজিটাল ডিভাইসের তথ্য বিশ্লেষণ
- কোন কোন স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সিন্ডিকেটকে রক্ষা করেছিল
ইডির দাবি, বাংলা–ঝাড়খণ্ড সীমান্তে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিল এই কয়লা সিন্ডিকেট। উদ্ধার হওয়া নথিতে বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেনের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
🧾 কী এই মামলা? একনজরে পুরো ঘটনাপ্রবাহ
গত ২১ ও ২২ নভেম্বর, ইডি একযোগে অভিযান চালায়—
- কলকাতা
- হাওড়া
- পুরুলিয়া
- পশ্চিম বর্ধমান
মোট ২৪টি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়।
সবচেয়ে বেশি অভিযান হয় শিল্পাঞ্চলে—
- দুর্গাপুরে ৯টি জায়গায়
- রানিগঞ্জ
- পান্ডবেশ্বর
- চৌরঙ্গির ডিবুডিহ চেকপোস্ট
তদন্তের আওতায় রয়েছেন কৃষ্ণ মুরারি কায়াল, নারায়ণ নন্দ, যুধিষ্ঠির ঘোষ, নীরদ বরণ মণ্ডল, শ্যামসুন্দর ভালোটিয়া, চিন্ময় মণ্ডল, পারভেজ সিদ্দিকি, লোকেশ সিং, শশী যাদব ও রাজকিশোর যাদব।
একইসঙ্গে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে ধানবাদ পর্যন্ত ১৮টি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়। ধানবাদে বড় কয়লা ও বালি ব্যবসায়ী লাল বাহাদুর সিং ওরফে এলবি সিং এবং তাঁর সহযোগীদের বাড়ি ও অফিসে অভিযান চলে।

💰 বিপুল উদ্ধার, নথিতে কাঁপছে সিন্ডিকেট
এই অভিযানে ইডি উদ্ধার করেছে—
- ১৪ কোটি টাকার বেশি নগদ অর্থ
- সোনা ও গয়না
- কয়লা সিন্ডিকেট সংক্রান্ত সম্পত্তির দলিল
- জমি কেনাবেচার কাগজ
- প্রায় ১২০টি জমির দলিল
- গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল ডিভাইস
ইডির দাবি, কেকে–এলবি যোগসাজশে পরিচালিত একটি বিশাল কয়লা সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল এবং প্রশাসনিক মদত ছাড়া তা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয় দফায় চলতি মাসে কয়লা আউটসোর্সিং ও পরিবহণ সংস্থা ডেকো ইঞ্জিনিয়ারিং ও গোদাবরী কমোডিটিজ-এর অফিস ও কর্তাদের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে।
🚨 সামনে কী?
ইডি সূত্র বলছে,
👉 জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেই বড় সিদ্ধান্ত
👉 গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল
👉 রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে অস্বস্তি বাড়ছে
কয়লা বেল্টে এখন একটাই প্রশ্ন—
এই অভিযানে কার নাম সামনে আসছে, আর কে পড়তে চলেছে জালে?











