কলকাতা (প্রেম শঙ্কর চৌবের রিপোর্ট):
বেআইনি বালু ব্যবসা ও মানি লন্ডারিং মামলায় ফের সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি (Enforcement Directorate)। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলকাতা, আসানসোল ও ঝাড়গ্রামসহ রাজ্যের সাতটি জায়গায় একযোগে হানা দিয়েছে ইডির একাধিক দল।
ইডি সূত্রে খবর, এই তদন্ত শুধুমাত্র বালু পাচার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বালু ব্যবসার টাকায় মানি লন্ডারিং করে হাওলার মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়েছিল।
🔍 আসানসোলে অভিযান: মণীশ বাগাড়িয়ার বাড়িতে রেড
আসানসোল দক্ষিণ থানার ওয়ার্ড নম্বর ৪১-এর মুর্গাসোল এলাকায় বালু ব্যবসায়ী মণীশ বাগাড়িয়ার বাড়ি ও অফিসে সকাল থেকে চলছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তল্লাশি।
অভিযোগ, বাগাড়িয়া বিভিন্ন জেলায় সরকারি বালু ঘাট পরিচালনা করে কোটি টাকার লেনদেনে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।

ইডির পাশাপাশি আয়কর দফতরের একটি দলও আসানসোলে উপস্থিত রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
⚒️ ঝাড়গ্রামে তল্লাশি: সওরভ রায় ও শেখ জহিরুলের বাড়িতে অভিযান
ঝাড়গ্রামের লালগড়ে বালু ব্যবসায়ী সওরভ রায়ের বালু খনি ও অফিসে চলছে ইডির রেড। সওরভ রায়ের একাধিক বালু খনি রয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলায়।
এর আগে তার মেদিনীপুরের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল, যেখানে প্রায় ₹৬.৫ লক্ষ উদ্ধার করা হয়।
একইসঙ্গে গোপীবল্লভপুরের শেখ জহিরুল আলির বাড়ি ও অফিসেও তল্লাশি চলছে। তার বাড়ি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ইডি ₹২.৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছিল।

🚛 বালু পাচারের কৌশল: একই ট্রাক নম্বরে একাধিক গাড়ি!
তদন্তে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য — একই ট্রাক নম্বর ব্যবহার করে একাধিক ট্রাকের মাধ্যমে বালু পাচার করা হতো।
সরকারি পারমিটে দেওয়া QR কোডও ছিল নকল। ফলে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে অতিরিক্ত ট্রাক পাঠিয়ে কোটি টাকার বালু পাচার চলত বছরের পর বছর।
স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে এই চক্রের যোগসূত্র রয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই দুর্নীতি জালের পেছনে রাজনৈতিক আশ্রয়ও রয়েছে।
💼 পূর্ববর্তী অভিযান ও উদ্ধার হওয়া টাকা

গত ৯ সেপ্টেম্বর ইডি রাজ্যের একাধিক স্থানে তল্লাশি চালিয়ে মোট ১ কোটিরও বেশি নগদ টাকা উদ্ধার করেছিল।
তখন সওরভ রায় ও শেখ জহিরুলের বাড়ি থেকেই ওই টাকা পাওয়া গিয়েছিল। আজকের অভিযান সেই মামলারই বিস্তৃত তদন্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
🗳️ নির্বাচনের আগে ইডির তৎপরতায় রাজনৈতিক উত্তাপ
নির্বাচনের ঠিক আগে ফের ইডির অভিযান ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বিজেপি বলছে, দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলার জন্য এই তদন্ত জরুরি।