কলকাতা/আসানসোল।
কয়লা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ইডির টানা দু’দিনের মেগা অভিযানের পর একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসছে। তদন্তে জানা গেছে—পুরো কয়লা সিন্ডিকেট নাকি স্থানীয় প্রশাসন ও কিছু ‘প্রভাবশালী কর্মকর্তা’র সম্পূর্ণ আশীর্বাদ ও সুরক্ষায় পরিচালিত হত! ইডি এখন এই নেক্সাস ভাঙতে বদ্ধপরিকর।
ইডির দাবি, কয়লা সিন্ডিকেটের দুই সবচেয়ে বড় মাথা কৃষ্ণ মুরারি কায়াল ওরফে বিল্লু ওরফে KK এবং লাল বাহাদুর সিংহ ওরফে LB, এবং এদের সঙ্গে যুক্ত ‘অফিসারদের’ গোপন যোগই এই সাম্রাজ্যকে এত শক্তিশালী করেছিল।
ইডির সূত্র বলছে,
“এই সিন্ডিকেট এতদিন ধরে চলা কোনও সাধারণ ভুল নয়—এটি একটি সুসংগঠিত অপরাধচক্র, যার প্রভাব স্থানীয় প্রশাসনের ভিতর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে।”
৪৪ জায়গায় ইডির হানায় উদ্ধার ১৪ কোটিরও বেশি নগদ, সোনার গয়না, নথি ও ডিজিটাল প্রমাণ
প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে মোট ৪৪টি জায়গায় একযোগে অভিযান চালায় ইডি। উদ্ধার হয়—
- ১৪ কোটির বেশি নগদ টাকা
- সোনা ও গয়না
- জমির দলিল
- একাধিক শেল কোম্পানির ডকুমেন্ট
- ডিজিটাল ডিভাইস
- গোপন ডায়েরি ও হিসাববই
এই তালিকায় রয়েছে:
📍 ঝাড়খণ্ড: ধানবাদ, দुमকা—LB, অনিল গোয়েল, সঞ্জয় খেমকা, অমর মণ্ডলদের ঠিকানা
📍 পশ্চিমবঙ্গ: দুর্গাপুর, পুরুলিয়া, হাওড়া, কলকাতা—KK, নরেন্দ্র খরকা, যুধিষ্ঠির ঘোষসহ আরও অনেকে
অভিযানে ইডির ১০০+ আধিকারিক ও CRPF জওয়ান উপস্থিত ছিলেন।
গোপন ডায়েরিতে বিস্ফোরণ — ৪৪টি পরিচয়ের মতো এবারও ফাঁস ৪ জন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তির নাম
KK-র বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ডায়েরির পাতায় উঠে এসেছে ৪টি চাঞ্চল্যকর নাম—
- গোপী পাল (আন্ডাল)
- পাপ্পু সিংহ (রানিগঞ্জ)
- রণধীর সিংহ (কাজোদা)
- রতন রায় (পাঞ্জাবি মোড়)
ডায়েরির নোটে দেখা গেছে—এই চারজনের মাধ্যমে কালো টাকার বিশাল লেনদেন হয়েছে। শুধু পাপ্পু সিংহের নামই রয়েছে ডজনেরও বেশি বার।
ইডি শীঘ্রই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করতে পারে।

৭.৯ লাখ মেট্রিক টন বেআইনি কয়লা উদ্ধার – তিনটি কোক প্ল্যান্ট থেকে কাঁপুনি শিলপাঞ্চলে
ওয়েস্ট বেঙ্গলের তিনটি কোক প্ল্যান্টে ইডির হানায় ৭,৯০,০০০ MT অবৈধ কয়লা উদ্ধার হয়েছে, যার বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা।
এত বড় আকারের অবৈধ কয়লা মজুত প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে সম্ভব নয়—সেটাই এখন ইডির তদন্তের মূল প্রশ্ন।
কারা সেই ‘Local Authorities’?
ইডির ধারণা, সিন্ডিকেটকে রক্ষা করত:
- কিছু পুলিশ-প্রশাসনের প্রভাবশালী সদস্য
- ECL–BCCL–Coal India–র কিছু অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি
- নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কিছু কর্মকর্তা
ইডির ভাষায়:
“এত বড় সিন্ডিকেট চলতে পারে না যদি বহু পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চোখের সামনে অপরাধকে আড়াল না করা হয়।”
KK–LB: দুই রাজ্যের দুই ‘কমান্ডার’
- KK—পশ্চিমবঙ্গের সিন্ডিকেট প্রধান
- LB—ঝাড়খণ্ডে সিন্ডিকেটের শীর্ষ মাথা
দু’জনেরই শাসকদল–বিরোধীদল উভয় শিবিরে প্রভাব ছিল।
KK তো ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশ সফরদলের অংশও ছিলেন।
LB-র দাপট এমন ছিল যে—CBI দলকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল এবং ED-র ওপর পোষা কুকুরও ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
টেরর ফান্ডিং, নকল নোট, অস্ত্র পাচার — সব দিকেই নজর
ইডির সন্দেহ—
- হাওলা লেনদেন
- নকল নোট চক্র
- অস্ত্র ব্যবসা
- মাওবাদী সংযোগ
সবই এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হয়ে থাকতে পারে। তাই তদন্ত এখন আরও গভীরে।
জনগণের নজর—এবার কাদের গ্রেফতার করা হবে?
এই চাঞ্চল্যকর তদন্তের পর শিলপঞ্চল ছাড়াও গোটা বাংলা–ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।
এখন প্রশ্ন—
- কারা সেই কর্মকর্তারা যারা সিন্ডিকেটকে রক্ষা করছিল?
- কারা এবার গ্রেফতারের তালিকায়?
- স্থানীয় প্রশাসন এবার কী ব্যবস্থা নেবে?
ইডির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েই এখন জনমনে তীব্র কৌতূহল।












