কয়লা–বালি–জমি–ড্রাগস: আসানসোলে ‘মাফিয়া সাম্রাজ্য’-এর অভিযোগে রাজনৈতিক ঝড়
আসানসোল: এখনও বিধানসভা নির্বাচনের অনেক সময় বাকি। তার আগেই রাজ্যের শিল্পাঞ্চলে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ চরমে পৌঁছাচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের এসআইআর (স্পেশাল সামারি রিভিশন) কাজ চলছে। তবে তার আগেই শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক লড়াইয়ে উত্তাল আসানসোল।
গত ৮–১০ দিন ধরেই একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি শহরের রাজনীতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর গির্জা মোড়ে বিজেপির পরিবর্তন সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বক্তব্য রাখেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। ওই সভা থেকেই শিল্পাঞ্চলের বিশিষ্ট সমাজকর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ কার্যত সক্রিয় রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এর ঠিক এক সপ্তাহ পর একই গির্জা মোড়ে পাল্টা সভার আয়োজন করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন রাজ্যের আইন ও শ্রম দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের একাধিক জেলা ও শহরের শীর্ষ নেতৃত্ব।
⚡ মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে বিজেপির সাংবাদিক সম্মেলন
মন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্যের প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে আসানসোল জেলা বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপি। সেখান থেকেই একের পর এক গুরুতর অভিযোগ তোলা হয় রাজ্য সরকার, মন্ত্রী, এমএলএ এবং পুরসভার বিরুদ্ধে।
🗣️ জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্যের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন:
- কেন এবং কতবার ইডি নোটিস পাঠিয়েছে মন্ত্রী মালয় ঘটককে?
- যদি বিজেপির মঞ্চে কয়লা ও জমি মাফিয়া থাকে, তবে রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?
- আসানসোল শহরে ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে হাটন রোডে অবৈধ দখল উচ্ছেদ হচ্ছে না, ই-রিকশার দাপট নিয়ন্ত্রণেও নেই কোনও পদক্ষেপ।
- অথচ কুমারপুরের দরিদ্র ব্যবসায়ীদের উপর চলছে প্রশাসনিক অত্যাচার।
🔥 তাপসী রেল সাইডিং নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ
দেবতনু ভট্টাচার্যের আরও অভিযোগ,
উত্তর বিধানসভার এক এমএলএ-র ছেলে প্রেমপাল তাপসী রেল সাইডিংয়ে সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন। সেখানে সম্পূর্ণভাবে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এসআইআর প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার জন্য নাকি ষড়যন্ত্রও চলেছিল, কিন্তু সেই পরিকল্পনা এখন ভেঙে পড়ছে।
🚩 কৃষ্ণপ্রসাদের হুঙ্কার: “২০২৬-এ বাংলায় বিজেপি সরকার, শিলপাঞ্চলের ৯ আসনেই জয়”
বিজেপির হিন্দিভাষী নেতা কৃষ্ণপ্রসাদ বলেন,
“পরিবর্তন সভার পর তৃণমূল দিশেহারা। শিল্পাঞ্চলে সম্পূর্ণভাবে মাফিয়া রাজ কায়েম হয়েছে। রেলপাড়ার ৩৫০ কোটির কেলেঙ্কারি কার নির্দেশে হয়েছে, সবাই জানে। গত ১৫ বছরের অন্ধকার অধ্যায় এক এক করে সামনে আসবে।”
তিনি স্পষ্ট জানান, ২০২৬ সালে বাংলায় বিজেপি সরকার গঠন করবে এবং পশ্চিম বর্ধমানের ৯টি আসনেই জয়ী হবে।
⚠️ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিস্ফোরণ: “ইসিএল ধ্বংস, বেতন বন্ধ, চারদিকে অবৈধ দখল”
রাজ্য বিজেপি নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন,
- তৃণমূলের আশ্রয়ে ইসিএল আজ লোকসানে, শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না।
- কয়লা, বালি লুট অবাধে চলছে।
- উত্তর বিধানসভা জুড়ে রাস্তার ধার জুড়ে জমি দখল, বেআইনি লোহার ওজন মেশিন বসানো হয়েছে।
- রেলপাড়ায় মাদক চক্র সক্রিয়, জমি কারবার চরমে।
- ভবভূরিয়া নদীর পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে সেখানে ছটপুজো করাও অসম্ভব হয়ে উঠবে।
তিনি কটাক্ষ করে বলেন,
“মলয় ঘটক গত ১৫ বছর ধরে মন্ত্রী ও বিধায়ক। কিন্তু উন্নয়নের কোনও জবাবদিহি নেই।”
🔍 রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কা
এই সমস্ত গুরুতর অভিযোগের পর আসানসোল রাজনীতিতে নতুন করে আগুন লেগেছে। এখন শহরবাসী তাকিয়ে আছেন,
➡️ তৃণমূল কংগ্রেস কবে, কীভাবে এই অভিযোগগুলোর জবাব দেয়।












