কলকাতা: অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা টোটো চলাচল এবার লাগাম টানতে চলেছে রাজ্য পরিবহন দফতর। রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেন — আগামী ৩০ নভেম্বরের পর শুধুমাত্র TTEN (Temporary Toto Enrollment Number) যুক্ত টোটো রাস্তায় চলতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে রাজ্যের শহর ও গ্রামীণ এলাকায় লাগামছাড়া টোটো চলাচলে রাশ টানবে বলে দাবি দফতরের।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিবহন সচিব ডঃ সৌমিত্র মোহন এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বৈঠকটি হয় কলকাতার কসবা অঞ্চলের দফতরের ভবনে।
তবে এখন বড় প্রশ্ন — রাজ্য প্রশাসন কি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবে? নাকি আগের মতোই কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে? কারণ, এর আগেও একাধিকবার টোটো নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সবই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক স্বার্থ ও ভোটব্যাংকের চাপে ভেস্তে গিয়েছিল।

🔹 অনলাইনে টোটো রেজিস্ট্রেশন শুরু ১৩ অক্টোবর থেকে
মন্ত্রী জানান, রাজ্য জুড়ে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে টোটো রেজিস্ট্রেশন চলবে। টোটো মালিকদের পরিবহন দফতরের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
রেজিস্ট্রেশনের ফি ধার্য করা হয়েছে ₹১,০০০ টাকা, এবং ছয় মাস পর প্রতি মাসে ₹১০০ টাকা করে রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ দিতে হবে।
মন্ত্রী আরও জানান, TTEN প্রাপ্ত টোটোদের জন্য লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সুবিধাও থাকবে।
🔹 অধিক টোটো চলাচল এলাকায় আসছে ‘অড-ইভেন’ নিয়ম
পরিবহন দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজ্যের যেসব শহর বা জেলায় টোটোর সংখ্যা অত্যাধিক, সেখানকার রাস্তায় জানুয়ারি ২০২৬ থেকে অড-ইভেন ভিত্তিক চলাচল ব্যবস্থা চালু হতে পারে। অর্থাৎ একদিন বিজোড় নম্বর, পরদিন জোড় নম্বরের টোটো চলবে। এই নিয়ম মনিটর করবে স্থানীয় পৌরসভা ও থানাগুলি।

🔹 নম্বরপ্লেটে থাকবে QR কোড, থাকবে সম্পূর্ণ ডাটাবেস
TTEN নম্বর হবে আপাতত অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন নম্বর। নম্বরপ্লেটে থাকবে QR কোড, যার মাধ্যমে টোটোর মালিক ও যানবাহনের তথ্য সহজে জানা যাবে। প্রতিটি RTO অফিসে এই তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
🔹 সরকারের কাছেও নেই টোটোর নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান
মন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, রাজ্য সরকারের কাছেও সঠিকভাবে টোটোর সংখ্যা জানা নেই। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে টোটো চলার ফলে শহরাঞ্চলে ভয়াবহ যানজট ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। তবু সরাসরি নিষিদ্ধ না করে সরকার এবার টোটো চলাচলকে নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করার পথে হাঁটছে।
🔹 ভোটব্যাংকের রাজনীতি কি আবারও বাধা হবে?
প্রাথমিকভাবে পরিবেশবান্ধব পরিবহনের উদ্দেশ্যে টোটো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা রাজনৈতিক স্বার্থে বিকৃত হয়ে পড়ে। এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শহরের প্রতিটি মোড়ে মানুষের চেয়ে টোটোর সংখ্যা বেশি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিশোর বয়সী চালকরা লাইসেন্স ছাড়াই টোটো চালাচ্ছে। অনেক সময় তারা জোরে গান বাজায়, যত্রতত্র বাঁক নেয়, ট্রাফিক নিয়ম মানে না। রাতে ভাড়ার নামে হয়রানি, এমনকি মহিলাদের প্রতি অশালীন মন্তব্যও ক্রমবর্ধমান।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার এবার কড়া অবস্থান নিয়েছে। তবে রাজনৈতিক চাপ কি এই পদক্ষেপকে আবারও ব্যাহত করবে? নাকি সত্যিই রাজ্যের রাস্তায় এবার নিয়মের শাসন ফিরবে—সেই দিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।