আসানসোলের মহিশিলা এলাকার সংকীর্ণ গলিপথে অবস্থিত রঞ্জিত পালের ওয়ার্কশপ। চারপাশে বৃষ্টির টানা ঝরনা, আর মাটির মূর্তিগুলিতে ঘেরা এই ওয়ার্কশপে শিল্পীরা নিঃশব্দে কাজ করছেন।
সারা বাংলা এখন ব্যস্ত দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতে, কিন্তু এই বৃষ্টি মূর্তি শিল্পীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। চলুন আসানসোলের মহিশিলা এলাকায়, যেখানে রঞ্জিত পাল ও তার সহশিল্পীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন পুজোর আগেই মূর্তি তৈরির জন্য।
রঞ্জিত পাল মাটির মূর্তি গড়ছেন, তার চারপাশে অন্যান্য শিল্পীরা নিঃশব্দে কাজ করে চলেছেন।
“বৃষ্টিতে কাজ খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। মাটি শুকানোর সমস্যাও আছে, মূর্তি সুরক্ষিত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। উপরন্তু, সময় খুবই কম, আর পুজো শুরু হতে বাকি মাত্র ১০ দিন।” মূর্তি তৈরির প্রক্রিয়া চলছে, শিল্পীরা মাটি মাখছেন, আধা-তৈরি মূর্তিগুলি সাজানো। শিল্পীরা নিখুঁতভাবে মূর্তিতে ছোট কাজগুলো করছেন।
মাটি শুকানো এবং ফাটল না হওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টানা বৃষ্টির জন্য পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়েছে, কিন্তু কাজ থামার কোনো সুযোগ নেই। সময়ের অভাব এবং পুজো আসন্ন হওয়ায় তারা সময়মতো মূর্তি তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আরেক শিল্পী মূর্তি গড়ছেন, তার আঙুল মাটিতে ডুবিয়ে রেখেছেন।
“এত পরিশ্রমের পরেও আয় খুবই কম। মূর্তি তৈরি করতে প্রচুর সময় এবং পরিশ্রম লাগে, কিন্তু সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। আমরা যা পাই তা খরচের থেকেও কম।”
শিল্পীরা ছাতার নিচে বসে মূর্তিতে শেষ টান দিচ্ছেন, অনেক মূর্তি ত্রিপলের নিচে রাখা হয়েছে বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে। কিছু মূর্তি শুকানোর জন্য ফ্যান লাগানো হয়েছে।
মূর্তি তৈরির কাঁচামালের দাম আকাশছোঁয়া। মাটি, খড়, বাঁশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু শিল্পীরা তাদের কঠোর পরিশ্রমের যোগ্য মূল্য পাচ্ছেন না। আর্থিক সমস্যার মাঝেও এই শিল্পীরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন, যাতে সময়মতো মূর্তি তৈরি করা যায়।
দুর্গা মায়ের মূর্তিতে শেষ টান দিতে ব্যস্ত এই শিল্পীরা। তাদের মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও এক ধরনের তৃপ্তির ছাপও ফুটে উঠেছে। এই শিল্পীদের কাজ শুধুমাত্র মাটি আর জলে সীমাবদ্ধ নয়, এটি তাদের কঠোর পরিশ্রম, বিশ্বাস এবং নিষ্ঠার প্রতীক।
দুর্গাপুজো আমাদের কাছে আনন্দ এবং উদযাপনের সময়, কিন্তু এই শিল্পীদের জন্য এটি কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক। বৃষ্টি, সময় এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার সাথে লড়াই করে মায়ের প্রতিমা তাদের হাতের ছোঁয়ায় প্রাণ পাচ্ছে।
মূর্তি প্রস্তুত হচ্ছে, পেছনে টানা বৃষ্টি চলছে। মূর্তির চোখ জ্বলজ্বল করছে, যেন দেবী দুর্গা স্বয়ং মূর্তিতে বিরাজ করছেন।
প্রতি বছর, এই শিল্পীরা তাদের নিষ্ঠা ও ভালবাসার মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরেন উৎসবের আসল রূপ। তাদের নিবেদন এবং প্যাশনই আমাদের দুর্গা মায়ের আশীর্বাদ এনে দেয়।