১৩০টি সিসিটিভির দাবিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফের চুরি, রানিগঞ্জে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

single balaji

রানিগঞ্জ:
রানিগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে অপরাধীরা কার্যত বেপরোয়া আর পুলিশ অসহায় দর্শকের ভূমিকায়। সম্প্রতি রানিগঞ্জ থানার পক্ষ থেকে শহরজুড়ে ১৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে ডিজিটাল নজরদারির দাবি করা হলেও, সেই দাবির বাস্তব চিত্র প্রকাশ্যে চলে এল ফের এক দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায়।

শহরের অন্যতম নিরাপদ ও অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত স্কুল পাড়া, ওয়ার্ড নম্বর ৯৩-এ এক নামী শিক্ষাবিদের বাড়িতে চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যেখানে এই চুরি হয়েছে, সেই এলাকায় কোনও সিসিটিভি ক্যামেরাই নেই। ফলে পুলিশের নজরদারি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে শহরের সচেতন মহল।

কী ঘটেছে?

স্কুল পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা ডঃ নিপাঙ্কর হাজরা, যিনি টিডিবি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ছিলেন এবং পরে চন্দননগর কলেজে দায়িত্ব পালন করেন, তাঁর বাড়িতেই এই চুরির ঘটনা ঘটে। অবসর গ্রহণের পরেও রাজ্য সরকার তাঁকে সাত বছরের জন্য পরিষেবা সম্প্রসারণ দিয়েছিল। গত বছরই তিনি সম্পূর্ণ অব্যাহতি পান।

বর্তমানে হাঁটুর চিকিৎসার জন্য ডঃ হাজরা ভেলোর (চেন্নাই)-এ রয়েছেন। এই সুযোগকেই কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। বাড়ির মূল দরজার দুটি তালা ভেঙে এবং ভিতরের ঘরের তালা ভেঙে আলমারি থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা নগদ ও রুপোর সামগ্রী নিয়ে চম্পট দেয় তারা।

পরিবারের বক্তব্য

ডঃ হাজরার দুই ভাই সমীর হাজরা ও শুভঙ্কর হাজরা জানান,
“ভোরবেলা প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে দেখি বাড়ির দরজার সব তালা ভাঙা। ভিতরে ঢুকে দেখি সব জিনিস ছড়ানো। ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা ও রুপোর জিনিস নিয়ে পালিয়েছে চোরেরা। খবর পেয়ে ভাই ভেলোর থেকে ফিরছেন।”

পুলিশ তদন্তে, কিন্তু ক্ষোভ তুঙ্গে

ঘটনার খবর পেয়ে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নিয়মিত টহল না থাকায় পরিকল্পিতভাবেই চুরি চালানো সম্ভব হয়েছে

কেন গুরুত্বপূর্ণ স্কুল পাড়া?

স্কুল পাড়া রানিগঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক এলাকা। এখানে রয়েছে দুটি বড় উচ্চ বিদ্যালয়, বহু নামী চিকিৎসকের চেম্বার, ওষুধের দোকান এবং বহু অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীর বাসস্থান। এমন এলাকায় সিসিটিভির অভাব ও নিরাপত্তার ঢিলেমি স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলছে।

মাত্র চার দিন আগেই উদ্বোধন হয়েছিল সিসিটিভি

উল্লেখযোগ্য যে, ২২ ডিসেম্বর রানিগঞ্জ থানায় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহরের নিরাপত্তার জন্য বসানো ১৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা ও কন্ট্রোল রুমের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী ও স্থানীয় বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন দাবি করা হয়েছিল, গোটা শহর এখন ডিজিটাল নজরদারির আওতায়।

কিন্তু উদ্বোধনের মাত্র চার দিনের মধ্যেই এই চুরি ফের পুলিশের দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

বাড়ছে চুরি, বাড়ছে আতঙ্ক

চলতি বছরে রানিগঞ্জ থানার এলাকায় একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে—

  • বারাবাজারে জিত স্টোরে ছাদ কেটে চুরি
  • রোনাইয়ের মণ্ডল পাড়ায় তালা ভেঙে লক্ষাধিক টাকার চুরি
  • মহাবীর কোলিয়ারিতে মোবাইল দোকানে দুঃসাহসিক ডাকাতি

নাগরিক সমাজের কড়া দাবি

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুভাষ স্বদেশ ভাবনা-র চেয়ারম্যান গোপালচন্দ্র আচার্য বলেন,
“সিসিটিভি বসিয়েই পুলিশ আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। অপরাধীরা তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে দিল।”

রানিগঞ্জ সিটিজেন্স ফোরামের এক শীর্ষ কর্তা জানান,
“রাতে টহল বাড়াতে হবে। দিনে কয়লা-বালি চোরাচালান আর রাতে চুরি—সবাই দেখছে, শুধু পুলিশ যেন দেখছে না।”

শহরের নাগরিক সমাজ এখন একসুরে দাবি তুলেছে—কঠোর পদক্ষেপ, সক্রিয় পুলিশি ব্যবস্থা ও প্রকৃত নজরদারি ছাড়া রানিগঞ্জে নিরাপত্তা ফিরবে না।

ghanty

Leave a comment