ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তের মধ্যেই রাণিগঞ্জে অবাধ কয়লা লুট, চরম উদ্বেগ

single balaji

রাণিগঞ্জে অবাধ কয়লা ও বালি পাচার, প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছেই লুট

কড়া পদক্ষেপের দাবি এলাকাবাসীর

রাণিগঞ্জ: ঐতিহাসিক শিল্পাঞ্চল রাণিগঞ্জ এখন কার্যত কয়লা ও বালি পাচারের এক ভয়ঙ্কর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আসানসোল–দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বহু হাজার কোটি টাকার কয়লা পাচার মামলায় যেখানে সিবিআই তদন্ত চালিয়ে একের পর এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করছে, সেখানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)ও কয়লা সিন্ডিকেটের উপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে। তবুও অবাক করার মতো বিষয়, রাণিগঞ্জ এলাকায় কিছু কয়লা পাচারকারী আগের মতোই অবাধে তাদের বেআইনি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।

1 20

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসিএলের একাধিক ওপেন কাস্ট খনি এই পাচারকারীদের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে কুনুস্তোরিয়া এলাকার নারায়ণকুড়ি ওপেন কাস্ট প্রজেক্ট (OCP) থেকে প্রতিদিন শত শত টন কয়লা প্রকাশ্যে লুট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও নিমচা ও কাঁটাগড়িয়া এলাকা থেকে চুরি হওয়া কয়লা রাণিগঞ্জে এনে মজুত করা হচ্ছে।

2

দিনের আলোতেই সাইকেল, ভ্যান, রিকশা ও ই-রিকশায় করে চুরি করা কয়লা বহন করা হচ্ছে। কয়লাভর্তি ভ্যানের পেছনে মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই সব কয়লা বোঝাই যানবাহন অনায়াসেই ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্ট পেরিয়ে যাচ্ছে।

4 20

যদিও পুলিশ প্রশাসনের দাবি, তথ্য পেলেই তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনও বড় পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। ফলে প্রশ্ন উঠছে—পাচারকারীরা কি প্রশাসনকে বোকা বানাচ্ছে, নাকি সবটাই লোকদেখানো তৎপরতা?

3 22

একই সঙ্গে দামোদর নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে বালি পাচারও চরম আকার নিয়েছে। বিশেষ করে বল্লভপুর, নুপুর, বেলুনিয়া ও নারায়ণকুড়ি এলাকায় রাতের অন্ধকার ও ভোরের আলো ফোটার আগেই নদী থেকে বেআইনিভাবে বালি তোলা হচ্ছে। গরুর গাড়ি, ট্র্যাক্টর ও বড় ট্রাকে করে সেই বালি নির্বিঘ্নে পাচার করা হচ্ছে।

WhatsApp Image 2025 12 24 at 16.31.14

বললে ভুল হবে না, বল্লভপুরে দামোদর নদীর ঘাট থেকে বালি তোলার বরাত পেয়েছে কেকে মিনারেলস। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ভুয়ো চালান দেখিয়ে নদীর মাঝখানে জেসিবি বসিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালি তোলা হচ্ছে। এমনকি নদীর মাঝেই দুটি অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে রাজ্যের সেচমন্ত্রীর কাছেও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।

এদিকে কুনুস্তোরিয়া এলাকার বেলবাঁধ রেল সাইডিং থেকেও বিপুল পরিমাণে ইসিএলের কয়লা চুরির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির ইসিএলের কিছু আধিকারিক, নিরাপত্তারক্ষী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী দুষ্কৃতীদের দিকে। রাতের অন্ধকারেই নয়, দিনের আলোতেও চলছে এই চুরি। অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে প্রশাসনের একাংশকে ‘ম্যানেজ’ করা হচ্ছে।

5 17

এই কারণেই পুলিশ, সিআইএসএফ ও ইসিএলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের তরফে দৃশ্যমান কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি স্থানীয়দের। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তবে এলাকাবাসীর প্রশ্ন একটাই—এই অবাধ লুট চলবে আর কতদিন? অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সচেতন নাগরিকরা।

ghanty

Leave a comment