বন্ধু খুনের সাজা পাঁচ বছর পর—যাবজ্জীবন পেল দুই সহোদর, ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা

single balaji

আসানসোল: ২০২০ সালের দুর্গাপুজোর সময় ঘটে যাওয়া নৃশংস বন্ধু খুনের ঘটনায় অবশেষে বিচার সম্পন্ন হল। শুক্রবার আসানসোল আদালতের এডিজে স্পেশাল কোর্টের বিচারক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য দুই অভিযুক্ত ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিলেন। পাশাপাশি অভিযুক্তদের প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্ত দুই অভিযুক্ত হল—
👉 রাহুল আকুড়িয়া
👉 মহঃ ইয়াকুব ওরফে সুশীল
তাঁদের বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার কাল্লা ইসিএল কোয়ার্টার এলাকায়।

এই মামলায় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন চিত্তরঞ্জন দে এবং তদন্তকারী অফিসার ছিলেন আসানসোল দক্ষিণ থানার এসআই গৌতম কর্মকার

📌 কীভাবে খুন হয়েছিল যুবক হর্ষবর্ধন?

খুন হওয়া যুবকের নাম হর্ষবর্ধন চৌহান ওরফে বিট্টু (২৩)। তাঁর বাড়ি কাল্লা আইওসি এলাকায়। পুলিশি সূত্রে জানা যায়,
২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর বিকেলে হর্ষবর্ধন নিজের মোটরবাইকে করে অভিযুক্ত দুই ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছিল। প্রথমে তারা কাল্লা রোডের এক শ্মশানে বসে মদ্যপান করে, তারপর তারা ঘাঘরবুড়ি মন্দির সংলগ্ন নুনিয়া নদীর ধারে যায়।

সেখানেই তিনজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। অভিযোগ, হর্ষবর্ধন অভিযুক্ত ইয়াকুবের স্ত্রীকে নিয়ে কুমন্তব্য করে। এই কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে ইয়াকুব পাথর দিয়ে হর্ষবর্ধনের মাথায় আঘাত করে। পরে রাহুলও পাথর দিয়ে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এরপর দু’জনে মিলে যুবকের গলায় জুতোর ফিতে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

তারা দেহ নদীতে ফেলার আগে যুবকের মানিব্যাগ, মোবাইল, ট্যাব ও এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর দেহটি নুনিয়া নদীতে ফেলে দেয়।

🕯️ তিন দিন পর নদী থেকে উদ্ধার দেহ

ছেলে বাড়ি না ফেরায় হর্ষবর্ধনের বাবা নরেন্দ্রনাথ চৌহান আসানসোল উত্তর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
২০ অক্টোবর, ঘাঘরবুড়ি মন্দির কর্তৃপক্ষ দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দিলে নদী থেকে পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। পরদিন ময়নাতদন্তে স্পষ্ট হয়—
👉 পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন
👉 গলায় ফিতে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ

🔍 স্বীকারোক্তি ও প্রমাণে শক্ত হয় মামলা

ঘটনার পর তদন্তে নেমে পুলিশ ২৪ অক্টোবর দুই ভাইকে গ্রেফতার করে। পুলিশি রিমান্ডে তারা খুনের কথা স্বীকার করে। অভিযুক্তদের দেখানো জায়গা থেকেই উদ্ধার হয় যুবকের
✔️ মোবাইল
✔️ ট্যাব
✔️ মানিব্যাগ
✔️ মোটরবাইক

মোট ২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন, যার মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক, তদন্তকারী অফিসার ও এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। সব তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার আদালত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেন এবং শুক্রবার সাজা ঘোষণা হয়।

⚖️ পাঁচ বছরের লড়াই শেষে ন্যায় পেল পরিবার

হর্ষবর্ধনের পরিবার জানিয়েছে, এই রায়ে তারা কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছে। এলাকাবাসীর মতে, এই রায় ফের প্রমাণ করল—
আইনের হাত দেরিতে হলেও ন্যায় নিশ্চিত করে।

ghanty

Leave a comment