আসানসোল (প্রেম শংকর চৌবে):
পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঝাড়খণ্ড—দুই রাজ্যের কয়লামাফিয়াদের বিরুদ্ধে ইডি’র বৃহত্তম সমন্বিত অভিযান দ্বিতীয় দিনেও বজ্রাঘাতের মতো চলল। শুক্রবার ভোরে একযোগে শুরু হওয়া এই দফায় দফায় তল্লাশিতে ইতিমধ্যেই ১০ কোটি টাকার বেশি নগদ, প্রায় ২৫ কোটি টাকার সোনা–গয়না, ৫০০ কোটিরও বেশি সম্পত্তির নথি এবং ১২০টি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উদ্ধার হয়েছে বলে সূত্রের খবর। ঝাড়খণ্ড ও বাংলার দুই শীর্ষ মাফিয়াকে ইডি ইতিমধ্যেই হেফাজতে নিয়েছে।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
🔥 ইডির হানায় ‘নতুন সিন্ডিকেট’-এর মেরুদণ্ড ভেঙে গেল
এই অভিযান সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে শিল্পাঞ্চলের নতুন সিন্ডিকেটকে।
ইডি শক্ত হাতে নেমে পড়েছে সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড কৃষ্ণ মুরারি কৈল ওরফে বিল্লু-র বিরুদ্ধে।
শিল্পাঞ্চলের মূল অপারেটর লোকেশ সিং-এর নামও এখন ইডির রাডারে।
এরপর থেকেই পুরো সিন্ডিকেটে ছড়িয়েছে তীব্র আতঙ্ক।
অপারেটর থেকে বাউন্টি-ম্যান—সবাই রাতারাতি গা ঢাকা দিয়েছে।
শুক্রবার রাত থেকেই হাইওয়ে থেকে উধাও হয়েছে তাদের বাইকার গ্যাং ও বোলেরো গ্যাং।
চাঁদাবাজির হাট বন্ধ। DO হোল্ডারদের ওপর চাপ বন্ধ।
দীর্ঘদিন পর প্রথমবারের মতো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন DO হোল্ডার ও ট্রান্সপোর্টাররা।
❗ সিন্ডিকেটে ভূকম্প—সাতগ্রাম, কুনুস্তোরিয়া, পাণ্ডেশ্বর, সোনপুর বজাড়ি জুড়ে নিস্তব্ধতা
যেখানে রাতদিন কয়লা উত্তোলন–বাহনের সময় চাঁদাবাজির দাপট ছিল, সেখানে এখন নীরবতা।
আগে যেসব ডিপো প্রতিদিন আলোয় ঝলমল করত,
আজ সেখানে শ্মশানের নীরবতা।

সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে যারা এ মুহূর্তে উধাও—
পাপ্পু সিংহ, শশী যাদব, সঞ্জয় যাদব, সোদু, অলোক, গোশ্য্টোসহ আরও অনেকেই
গতকাল সকাল থেকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।
💥 DO হোল্ডাররা: “২,০০০ টাকা প্রতি টন চাঁদা না দিলে গাড়িই ছাড়ত না!”
শিল্পাঞ্চলের একাধিক DO হোল্ডার জানিয়েছেন—
“বৈধভাবে কয়লা কাজ পেয়েও সিন্ডিকেটকে ২,০০০ টাকা প্রতি টন দিতে বাধ্য করা হতো।
না দিলে গাড়ি আটকে যেত।”
পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি।
কিন্তু ইডির অভিযানে কয়েক বছরের ভয় একদিনে কেটে গেছে।
শুক্রবার রাতেই DO হোল্ডাররা জরুরি বৈঠক করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন—
ED Kolkata (CGO Complex)-এ একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে
সম্পূর্ণ তথ্য, সিন্ডিকেটের সদস্যদের নাম, লোকেশন, দুর্নীতির প্রমাণ সব তুলে দেবেন।
তাদের আশা—
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই আরও বড় ঝাঁপাবে ইডি, আর শুরু হবে গ্রেপ্তারের পালা।
🚛 ট্রান্সপোর্টারদের বড় স্বস্তি—“চাঁদা না দিলে গাড়ি লোড হত না”
ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করে জানান—
“সিন্ডিকেট সিস্টেমের অংশ হয়ে গিয়েছিল।
লোডিংয়ের নামে বাধ্যতামূলক টাকা দিতে হতো।
এখন ইডির কারণে প্রথমবার চাঁদা ছাড়াই গাড়ি লোড হচ্ছে।”
এছাড়াও ইডি চাইলে সব তথ্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

🧿 দেবুঢিহি ও পাঞ্জাবি মোড়—চাঁদাবাজির মূল ঘাঁটি ধ্বংস
ইডির হাতে ধরা পড়েছে সিন্ডিকেট পরিচালিত বেআইনি অফিস,
যা দেবুঢিহি চেকপোস্ট-এ ছিল—এখান থেকেই
ঝাড়খণ্ড থেকে আসা গাড়িগুলোর ওপর চাঁদা তোলা হতো।
চক্রটি আদায় করত—
- ১৫,০০০–২০,০০০ টাকা বালিভর্তি গাড়ি থেকে
- ২৫,০০০ টাকা কয়লাবাহী গাড়ি থেকে
- ২,০০০ টাকা সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি থেকে
রানিগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড়েও রতনের নেতৃত্বে আরেকটি চেকপয়েন্ট চালানো হতো।
⚠️ সতর্ক বার্তা: “শিল্পাঞ্চলকে বাঁচাতে প্রশাসনেরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন”
ইডির এক সৎ আধিকারিকের কথায়—
“এই সিন্ডিকেট শুধু কয়লা নয়, সরকারের বিপুল রাজস্বও লুট করেছে।”
ইডির এই ধাক্কা শিল্পাঞ্চলের ভবিষ্যৎ রক্ষায় মাইলফলক হতে পারে।
তবে স্থানীয় পুলিশ–প্রশাসন কঠোর না হলে
শিল্পাঞ্চল বারাবনির মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনার দিকেই ধাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।












