দুর্গাপুর:
শোভাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল ছাত্রী গণধর্ষণ মামলায় তদন্ত দ্রুত এগিয়ে নিতে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট মঙ্গলবার বড় পদক্ষেপ নিল।
সকালে পুলিশের এক বিশেষ দল শেখ রিয়াজউদ্দিন ও শেখ নাসিরউদ্দিনকে তাদের নিজ গ্রাম বিজরা নিয়ে যায়। সেখানকার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাদের পরিধেয় পোশাক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন যে পোশাক পরেছিলেন, সেটিও উদ্ধার হয়েছে এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

⚡ পুলিশের বড় অভিযান – ‘ঘটনার পুনর্নির্মাণে’ নজিরবিহীন উদ্যোগ
তদন্তের স্বার্থে বিজরা গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে একাধিক সূত্র খোঁজা হচ্ছে। দুর্গাপুর নিউ টাউনশিপ ও দুর্গাপুর থানা মিলিতভাবে গোটা অভিযান পরিচালনা করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
পুলিশ দাবি করেছে, এই পুনর্নির্মাণ তদন্তে নতুন দিশা দেবে এবং খুব শীঘ্রই ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচিত হবে।

🚔 ডিসিপি (ইস্ট) অভিষেক গুপ্তর নেতৃত্বে ফরেস্টে পুনর্নির্মাণ অভিযান
সকালে প্রায় ১১টার সময় আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পূর্ব দিকের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গুপ্ত নিজে ঘটনাস্থলে পৌঁছন।
তিনি কলেজ গেট থেকে পরাঙ্গঞ্জ জঙ্গলের পাশ পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। মিডিয়াকে দূরে রাখতে গোটা রাস্তাটি ঘিরে ফেলা হয়। জানা গেছে, ডিসিপি নিজে ঘটনাটির রিকনস্ট্রাকশন (পুনর্নির্মাণ) করছেন।
🗣️ অভিযুক্তের স্ত্রীর দাবি – “স্বামী তো বাড়িতেই ছিল, ধর্ষণ করবে কীভাবে?”

মঙ্গলবার এক অভিযুক্তের স্ত্রী সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন,
“আমার স্বামী ঘটনার রাতে বাড়িতেই ছিল। তাহলে সে ধর্ষণ করল কীভাবে?”
এই মন্তব্যের পর তদন্তের দিক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ অবশ্য বলেছে —
“ঘটনার পুনর্নির্মাণ তদন্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সত্য উদ্ঘাটনে কোনও দিকই বাদ দেওয়া হবে না।”
🧾 অভিযুক্তদের পরিচয় ও তদন্তের অগ্রগতি
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ অভিযুক্তের মধ্যে একজন ওই মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন সিকিউরিটি গার্ড, অপরজন একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত।
আরেকজন স্থানীয় পুরসভার অস্থায়ী কর্মী, একজন বেকার।
সব অভিযুক্তকেই মঙ্গলবার চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
🌾 ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মজিহির আশ্বাস
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মজিহি মঙ্গলবার ফোনে ধর্ষিতা ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন —
“কোনও চিন্তা করো না, ওড়িশা সরকার তোমার পাশে আছে। তোমার পড়াশোনা ও চিকিৎসা — সবকিছুর দায়িত্ব আমরা নেব।”
ছাত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তাঁকে ওড়িশার কোনও মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করতে।
এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেবেন।

🧕 জাতীয় মহিলা কমিশনের চিঠি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে
জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) এই ঘটনার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপাল সি. ভি. আনন্দ বোস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে —
“ছাত্রীর মানসিক আঘাত ও পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। অবিলম্বে তার শিক্ষাজীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর বলেন —
“মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস নয়। আমরা এই মামলার নজরদারিতে থাকব যতক্ষণ না ভুক্তভোগী ন্যায় পায়।”
⚖️ ওড়িশা মহিলা কমিশনের আহ্বান – দ্রুত বিচারের দাবি
ওড়িশা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন শোভনা মহান্তি বলেন,
“আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি — ছাত্রীর সর্বোত্তম চিকিৎসা ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হোক। এই জঘন্য অপরাধীদের জন্য ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টে বিচার হওয়া উচিত।”