দুর্গাপুর: মেডিকেল ছাত্রীর উপর নৃশংস নির্যাতন কাণ্ডে রাজ্যে উত্তাল পরিস্থিতি!
দুর্গাপুর আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজের এক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে শুক্রবার রাতে গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে, তবে এখনো দুইজন পলাতক বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের মোবাইল নেটওয়ার্ক ট্র্যাক করে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর রাতভর বনাঞ্চলে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে দুইজন অভিযুক্ত এখনো অধরা, তাদের খোঁজে চলছে ব্যাপক অভিযান।
নিউ টাউনশিপ থানায় ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গণধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত মেডিকেল কলেজের কিছু কর্মী ও ছাত্রছাত্রীদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ
ছাত্রীর পরিবার যাদের উপর সন্দেহ প্রকাশ করেছে, তাদের কড়া জেরা চলছে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি, কলেজ ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল।
পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী ছাত্রীর বয়স ২৩ বছর এবং সে ওড়িশার জেলেশ্বরের বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে প্রায় সাড়ে ৮টার সময় সে তার এক পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়েছিল। সেই সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী তাদের পিছু নেয় এবং অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। পরে তারা জোর করে ছাত্রীটিকে নির্জন জায়গায় টেনে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
ভয়াবহ ঘটনার পর আহত ছাত্রীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ডাক্তারদের সংগঠন WBDF-এর নিন্দা, বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফ্রন্ট (WBDF) এই ঘটনাকে “নারী নিরাপত্তার ভয়াবহ ব্যর্থতা” বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ভারতের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে — ঘটনার স্বতঃস্ফূর্ত বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক এবং দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ ও টুইট
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মঞ্জি গভীর শোকপ্রকাশ করে টুইটে লেখেন — “আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। ভুক্তভোগীর পরিবারকে ওড়িশা সরকার সবরকম সাহায্য করবে।” পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিজেপির আক্রমণ — “রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে”
ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে ফের উত্তপ্ত রাজনীতি। বিজেপি অভিযোগ করেছে, “মমতা সরকারের আমলে নারী নিরাপত্তা শূন্যের কোঠায়।” আসানসোল থেকে কলকাতা — সর্বত্র প্রতিবাদ মিছিল, থানার ঘেরাও, ও সড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন —
“এই ধরনের অপরাধে অভিযুক্তদের যোগী আদিত্যনাথের মডেলে এনকাউন্টার করে শাস্তি দেওয়া উচিত। রাজ্যে এখন এমন এক সরকার দরকার, যারা দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে।”
তিনি আরও বলেন —
“কলকাতার কসবা ল কলেজে ধর্ষণ হোক বা দুর্গাপুর মেডিকেল কলেজের এই জঘন্য অপরাধ — সব ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ঝড়
রাজ্যের মন্ত্রী শশী পানজা পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন —
“বিজেপি এই সংবেদনশীল ঘটনাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। সরকার আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
এদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ, দোষীদের দ্রুত মৃত্যুদণ্ডের দাবি উঠছে সর্বত্র। দুর্গাপুর ও আসানসোল জুড়ে চলছে প্রতিবাদ মিছিল ও মোমবাতি পদযাত্রা।