কলকাতা:
গত ১৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একে একে চলে গেছে মোট ৬,৬৮৮টি কোম্পানি, এমনই বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই তথ্য উঠে এসেছে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় দেওয়া একটি লিখিত উত্তরে।
২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই বিপুল সংখ্যক কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিজেদের নিবন্ধিত সদর দপ্তর (Registered Office) সরিয়ে নিয়েছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাট-সহ বিভিন্ন রাজ্যে।
🏭 কোথায় গেল এই কোম্পানিগুলো?
- মহারাষ্ট্র: ১,৩০৮ টি কোম্পানি
- দিল্লি: ১,২৯৭ টি
- উত্তরপ্রদেশ: ৮৭৯ টি
- ছত্তিশগড়: ৫১১ টি
- গুজরাট: ৪২৩ টি
এছাড়াও রাজস্থান, আসাম, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যেও শত শত সংস্থা স্থানান্তরিত হয়েছে।

📉 ‘শিল্পে মৃতপ্রায় বাংলা’, বলছে বিরোধী বিজেপি
এই তথ্যকে হাতিয়ার করে বিজেপির IT সেলের প্রধান অমিত মালব্য এক্স-এ (X) তীব্র কটাক্ষ করে লেখেন:
“টিএমসি শাসনে বাংলা ছাড়ল ৬,৬৮৮ কোম্পানি! এটা শুধুই সংখ্যা নয়—এটা হারানো কর্মসংস্থান, বিনিয়োগের পতন, আর জনআস্থা হারানোর প্রতিচ্ছবি।”
তিনি দাবি করেন, এইসব সংস্থার মধ্যে ১১০টি ছিল শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, যা পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি ভয়ানক অশনি সংকেত।
📊 কোন বছরে কত কোম্পানি পালিয়েছে?
- ২০১৫-১৬: ৮৬৯ টি
- ২০১৬-১৭: ৯১৮ টি
- ২০১৭-১৮: সর্বোচ্চ ১,০২৭ টি
এই ক্রমবর্ধমান সংখ্যাই বলে দিচ্ছে, ২০১১ সালের পর তৃণমূল সরকারের সময়ে বিনিয়োগ পরিবেশ কীভাবে ক্রমাগত অবনতির দিকে গিয়েছে।
💬 রাজ্য সরকার চুপ কেন?
অর্থনীতিবিদ ও শিল্প সংগঠনগুলোর একাংশ মনে করছে,
“অতিরিক্ত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা, জমি ও পরিবেশ সংক্রান্ত নীতি দুর্বলতা, এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি—এই সব কারণেই রাজ্য থেকে পালাচ্ছে শিল্প।”
অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত এই তথ্যের প্রতিক্রিয়া আসেনি।
🔍 এই ‘বাণিজ্যিক গণপ্রস্থান’-এর দায় কে নেবে?
এই রিপোর্ট সামনে আসার পর রাজ্যের তরফে কোন শক্তপোক্ত যুক্তি বা ব্যাখ্যা না এলে, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে এটা হতে চলেছে একটা বড়ো হাতিয়ার।
“পশ্চিমবঙ্গ কি এবার শিল্পশূন্য বাংলায় পরিণত হচ্ছে?”
“যে রাজ্য এক সময় টাটাকে তাড়িয়েছিল, সেই রাজ্যের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল?”
🔚 উপসংহার:
এই প্রতিবেদন শুধু একগুচ্ছ সংখ্যার হিসেব নয়।
এটা এক অভিমান, এক উদ্বেগ, এক শিল্প-নির্বাসনের ইতিহাস।
এটা সেই প্রশ্নও—যার উত্তর খুঁজছে গোটা বাংলা:
“চাকরি কোথায়? শিল্প কোথায়? আমরা কোথায়?”